কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি।" ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত"এখন বাংলাদেশে একটি অতি জনপ্রিয় শব্দ অন্যকথায় একটি অতি শ্রদ্ধাভাজন শব্দ। এই শব্দটি আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ধর্মের সমালোচনাকারী বা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মুক্ত আলোচনাকে প্রতিরোধ করার মত কোন যুতসই কথা ঠিক পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ ধর্মে অবিশ্বাস বা নাস্তিককতার আলোচনা বা সমালোচনাকে একটা হীনতম পর্যায়ে চিহ্নিত করার বড় প্রয়োজন ছিল এদেশের জনগণের। আমাদের দেশে জনগণের এইসব প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যে কোন সরকার বা শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই তাদের গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারণ শাসক গোষ্ঠী চিরদিনই অনগ্রসর জনতার ধর্মীয় আবেগের প্রতি খুবই সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। সেকারণেই যখন মুক্তচিন্তার কিছু মানুষের ধর্ম বিষয়ক আলোচনা সমালোচনাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় বিশাল অনগ্রসর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তখনই আমাদের শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়" অনুভূতিতে আঘাত " শব্দটার প্রসব করে ফেললো আর অন্ধ জনতা নবজাতক এই যুতসই শব্দটাকে কোলে নিয়ে নাচতে থাকলো। শব্দটাকে অতি আদর অতি যত্ন দিয়ে অল্প দিনেই বিশাল বড় করে তুললো। শাসক গোষ্ঠী জনতাকে খুশী করার জন্য এবং মুক্ত আলোচকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য " ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত " এর বিষয়টি নিয়ে একটা আস্ত ফৌজদারি আইনই প্রণয়ন করে ফেললো। এখন বাংলাদেশে ধর্মীয় সমালোচনা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য। ব্যাস যা হওয়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়ে গেল। একটু ভিন্ন চিন্তা, একটুখানি অন্য কথা বলার পথ বন্ধ করে দেয়া হলো। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতি এখন এখন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠলো। অবশ্য যতই তীব্র হউক, এই অনুভূতির শারীরিক অবস্থা একেবারেই ননীর পুতুলের মত। সামান্য বাও বাতাসেও তার গায়ে আঘাত লাগে। অন্যায়,অপরাধ,অবক্ষয় আর দুর্নীতিতে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছে দেশ- এ নিয়ে আমাদের কোন অনুভূতিতে বিন্দুমাত্র আঘাতও লাগেনা। বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যদিন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের জীবন দু:সহ করে তুলছে এক শ্রেণীর মুনাফাখোর- কিন্তু এ নিয়ে আমাদের অনুভূতিতে কোন আঘাত লাগেনা। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুণ করা হয়েছে তবুও ঘুষখোরদের যন্ত্রণায় সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, এ নিয়েও আমাদের অনুভূতিতে কোনরকম আঘাত লাগেনা- এসব ক্ষেত্রে জনতার অনুভূতি বড়ই শক্ত ।দিন দিন বেড়েই চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, বলৎকার - অথচ এসব ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতি বড় নীরব,নিস্তেজ, নিরাবেগ কিন্তু ডারউইনের এভুলেশন থিউরির মত একটা আকর্ষণীয় বিষয় এদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে চট করেই আঘাত করে ফেলে।কারো কোন নতুন কথা যদি ধর্ম বিশ্বাসের চেয়ে একটুখানি অন্যরকম হয় তাহলে তৎক্ষনাৎ গরম তেলে পানি পড়ার মত চ্যাত করে ক্ষেপে উঠে জনতার অনুভূতি। হায়রে অনুভূতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি জনমদুখিনী বাংলাকে! হায়রে আমার করুন বাংলাদেশ! এই অনুভূতিহীন অনুভূতি কোন গহব্বরের দিকে তোমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছোনা তুমি !
Sunday, March 26, 2023
ধর্মীয় অনুভূতির কথা
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি।" ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত"এখন বাংলাদেশে একটি অতি জনপ্রিয় শব্দ অন্যকথায় একটি অতি শ্রদ্ধাভাজন শব্দ। এই শব্দটি আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ধর্মের সমালোচনাকারী বা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মুক্ত আলোচনাকে প্রতিরোধ করার মত কোন যুতসই কথা ঠিক পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ ধর্মে অবিশ্বাস বা নাস্তিককতার আলোচনা বা সমালোচনাকে একটা হীনতম পর্যায়ে চিহ্নিত করার বড় প্রয়োজন ছিল এদেশের জনগণের। আমাদের দেশে জনগণের এইসব প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যে কোন সরকার বা শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই তাদের গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারণ শাসক গোষ্ঠী চিরদিনই অনগ্রসর জনতার ধর্মীয় আবেগের প্রতি খুবই সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। সেকারণেই যখন মুক্তচিন্তার কিছু মানুষের ধর্ম বিষয়ক আলোচনা সমালোচনাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় বিশাল অনগ্রসর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তখনই আমাদের শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়" অনুভূতিতে আঘাত " শব্দটার প্রসব করে ফেললো আর অন্ধ জনতা নবজাতক এই যুতসই শব্দটাকে কোলে নিয়ে নাচতে থাকলো। শব্দটাকে অতি আদর অতি যত্ন দিয়ে অল্প দিনেই বিশাল বড় করে তুললো। শাসক গোষ্ঠী জনতাকে খুশী করার জন্য এবং মুক্ত আলোচকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য " ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত " এর বিষয়টি নিয়ে একটা আস্ত ফৌজদারি আইনই প্রণয়ন করে ফেললো। এখন বাংলাদেশে ধর্মীয় সমালোচনা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য। ব্যাস যা হওয়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়ে গেল। একটু ভিন্ন চিন্তা, একটুখানি অন্য কথা বলার পথ বন্ধ করে দেয়া হলো। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতি এখন এখন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠলো। অবশ্য যতই তীব্র হউক, এই অনুভূতির শারীরিক অবস্থা একেবারেই ননীর পুতুলের মত। সামান্য বাও বাতাসেও তার গায়ে আঘাত লাগে। অন্যায়,অপরাধ,অবক্ষয় আর দুর্নীতিতে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছে দেশ- এ নিয়ে আমাদের কোন অনুভূতিতে বিন্দুমাত্র আঘাতও লাগেনা। বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যদিন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের জীবন দু:সহ করে তুলছে এক শ্রেণীর মুনাফাখোর- কিন্তু এ নিয়ে আমাদের অনুভূতিতে কোন আঘাত লাগেনা। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুণ করা হয়েছে তবুও ঘুষখোরদের যন্ত্রণায় সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, এ নিয়েও আমাদের অনুভূতিতে কোনরকম আঘাত লাগেনা- এসব ক্ষেত্রে জনতার অনুভূতি বড়ই শক্ত ।দিন দিন বেড়েই চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, বলৎকার - অথচ এসব ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতি বড় নীরব,নিস্তেজ, নিরাবেগ কিন্তু ডারউইনের এভুলেশন থিউরির মত একটা আকর্ষণীয় বিষয় এদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে চট করেই আঘাত করে ফেলে।কারো কোন নতুন কথা যদি ধর্ম বিশ্বাসের চেয়ে একটুখানি অন্যরকম হয় তাহলে তৎক্ষনাৎ গরম তেলে পানি পড়ার মত চ্যাত করে ক্ষেপে উঠে জনতার অনুভূতি। হায়রে অনুভূতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি জনমদুখিনী বাংলাকে! হায়রে আমার করুন বাংলাদেশ! এই অনুভূতিহীন অনুভূতি কোন গহব্বরের দিকে তোমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছোনা তুমি !
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর
আলোর ঝিলিক শাহজাহান কবীর এই যে শনিবার তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ-- বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি দুলছি নিরর্থক...
-
শুরুতেই সবিনয়ে নিবেদন করিতেছি যে, এই 'কভিড -ফিলিংস' ভাইরাস মহাশয়ের বিবরণ আমি যথাসম্ভব সাধু ভাষায় বিবৃত করিবার চেষ্টা করিব। কেননা ...
-
আমেরিকার জ্যাকসন হাইটস-এ বাঙালীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান যেন না হতে পারে তার জন্য অনেক অপচেষ্টা করেছে সেখানকার মৌলবাদী গোষ্ঠী। উচ্চ আ...
-
আলোর ঝিলিক শাহজাহান কবীর এই যে শনিবার তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ-- বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি দুলছি নিরর্থক...
No comments:
Post a Comment