Tuesday, April 25, 2023

কভিড- ফিলিংস - ( ভয়াবহ এক ভাইরাস) -শাহজাহান কবীর


 শুরুতেই সবিনয়ে নিবেদন করিতেছি যে, এই 'কভিড -ফিলিংস'  ভাইরাস মহাশয়ের বিবরণ আমি যথাসম্ভব সাধু ভাষায় বিবৃত করিবার চেষ্টা করিব। কেননা আমার  এইরূপ আশংকা হইতেছে যে চলতি ভাষার মত চটুল ও সহজ কথায়  এই ভাইরাস মহয়াশয়ের  বিবরণ আপনাদের সম্মুখে দিতে গেলে ভাইরাস মহাশয় তাহার ফিলিংসে আঘাত করিবার দরুন স্বয়ং  ক্রোধান্বিত হইতে পারেন। তাই তাহার প্রতি যথাসম্ভব উঁচুদরের সম্মান প্রদর্শন পূর্বক যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখিয়া আপনাদের সম্মুখে তাহার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলিয়া ধরিতেছি।শুরুতেই আপনাদের অবগতির জন্য জানাইতেছি যে " কভিড- ফিলিংস মহাশয় ভাইরাস হইলেও কভিড- নাইন্টিন বা অমিক্রনের সঙ্গে ইহার যথেষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে। কভিড- নাইন্টিন বা অমিক্রন  পরিত্যাজ্য  জীবাণু। এই দুইয়ের দ্বারা আক্রান্ত দেশগুলোর সরকার তাহাদের  চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বারা এবং প্রতিরোধক টীকা  প্রয়োগের মাধ্যমে এই দুই ভাইরাসকে বিতাড়িত করিবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে । পক্ষান্তরে 'কভিড- ফিলিংস' ভাইরাস যেসব দেশকে আক্রান্ত করিয়াছে সেইসব দেশের সরকার তাহার সকল বিভাগ লইয়া এই ভাইরাস মহাশয়কে বাঁচাইয়া রাখিবার সর্ব প্রকারের প্রচেষ্টায় নিয়জিত রহিয়াছে এবং এই ভাইরাস মহাশয় যেন আরও দ্বিগুণ, তিনগুণ শক্তিশালী হইয়া দেশের আপামর জনতাকে তীব্রভাবে আক্রান্ত করিতে পারে তাহার সুব্যবস্থার জন্য সেইসব রাষ্ট্র অতিশয় মনোযোগী হইয়া যাবতীয় কর্মতৎপরতা চালাইয়া যাইতেছে। আরও অধিকতর এবং বিস্ময়কর একটি ব্যাপার হইল এই যে, জগতে এমন একটি দেশ আছে যে দেশে " কভিড- ফিলিংস ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করিবার কাজে একদল সন্ত নিয়োজিত রহিয়াছে  । সেই সন্ত মহাশয় গণ কভিড- ফিলিংস ভাইরাস ছড়াইয়া দিবার কর্মকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করিবার মহান পেশা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে। তাহারা সেই দেশের জনতার মাঝে  এই ধারণার জন্ম দিতে সক্ষম হইয়াছে যে " কভিড - ফিলিংস ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া একটি অতিশয় পূণ্যের কাজ।যে কারণে সেই দেশের জনতার কাছে এই ভাইরাস একটি অতিশয় পূজনীয় ও আরাধ্য  বিষয় হইয়া উঠিয়াছে।উইপোকা যেমন  অন্ধত্বের কারণে জলন্ত অগ্নিতে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া আত্মাহুতি দেয় তেমন সেই দেশের জনতা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হইবার আকুল আকাঙ্খা লইয়া  দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হইয়া দলে দলে  ছুটিয়া বেড়াইতেছে। অবস্থা  এমন হইয়াছে যে সেই দেশের ভিন্ন সম্প্রদায়ের কতিপয়  লোকজন  এখন তাহাদের অতি প্রয়োজনীয় বাক্যলাপ করিতেও ভীত সন্ত্রস্ত হইয়া থাকে এই কারণে যে মনের ভুলে আবার কোন বাক্য বা বাক্যাংশ এমন বেফাঁস হইয়া যায় কিনা যাহতে  কভিড- ফিলিংস মহাশয় আবার আঘাত প্রাপ্ত হইয়া ক্ষ্যাপিয়া উঠে। কেবল এইসব কতিপয়ের কাছেই এই ভাইরাস একটি ভয়াবহ আতংক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তাই এই দুর্ভাগা কতিপয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে তাহারা বাঁচিয়া থাকিতে আর বাক্যালাপ করিবেনা। কারণ তাহারা বিলক্ষণ স্বচোক্ষে অবলোকন করিয়াছে যে  - তাহাদের মধ্যে কেউ কেউ বেফাঁস বাক্যালাপ করিয়া  কভিড- ফিলিংস মহাশয়কে অসম্মান করার অপরাধে ইতোমধ্যে নানারকম ন্যক্কারজনক শাস্তিতে নিপতিত হইয়াছে।অতএব সাবধান!  অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক। যদ্যপি এই একটি বিষয়ের  ফিলিংসের প্রতি অতিশয় আসক্তি জন্মাইবার দরুন কথিত সেই দেশের জনতার দেহাভ্যন্তরস্থ অন্যান্য সকল ফিলিংস ইতোমধ্যে ভোতা বা সম্পূর্ণ অকেজো হইয়া গিয়াছে তথাপি তাহারা কভিড- ফিলিংসকে তাহাদের মাথার মনি হিসাবেই মান্য করিয়া লইয়াছে। ইহাতে কথিত সেই দেশটির জনতার মধ্যে যে বিশাল একটি সংখ্যা রহিয়াছে যাহাদের মধ্যে কতক ঘুষ খাইয়া জীবন ধারণ করে, কতক  দুর্নীতি করিয়া বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়িয়া লয়, কতক আছে অবৈধভাবে পণ্য মজুত করিয়া, বাজার সিন্ডিকেট সৃষ্টি করিয়া জনতার অর্থ লুটপাট করিয়া নিজেদের ফুলাইয়া ফাঁপাইয়া তুলিতেছে। এবং আরও কতক আছে যাহারা ক্রমাগত নারী নির্যাতন, বলৎকার করিয়া মাস্তি মৌজ করিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দিয়া তাহাদের অসৎ জীবন তরতর করিয়া আরামসে চালাইয়া লইয়া যাইতেছে সেইসব লোকদের মনে  বিন্দু পরিমানও ভয়ভীতি জাগ্রত হইতেছেনা। কারণ তাহাদের ইত্যাকার অপকর্মে সেই দেশের জনতার কোন ফিলিংকেই  কখনোই স্পর্শ করিতে পারে না।অর্থাৎ  কভিড- ফিলিংস ছাড়া অন্যকোন রকম ফিলিংস তাহাদের থাকুক ইহা মনের ভুলেও সেই দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে না। অতএব জয়তু কভিড- ফিলিংস !  জিতে রহো! 

No comments:

Post a Comment

আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর

 আলোর ঝিলিক  শাহজাহান কবীর  এই যে শনিবার  তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ--  বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি  দুলছি নিরর্থক...