Wednesday, April 5, 2023

'বিয়ে' - একটি অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট সামাজিক কুসংস্কার। শাহজাহান কবীর।

নারী- পুরুষ বা প্রাণী জগতের সকল শ্রেণীর মধ্যে বিপরীত  লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক আকর্ষণ প্রকৃতির এক অনিবার্য ও স্বাভাবিক জৈবিক প্রবাহ। নদী ও সমুদ্র  স্রোত, বায়ু প্রবাহ, পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি - এই সমস্ত কিছুরই প্রাকৃতিক স্বাভাবিক গতিধারাকে যেমন কোন আবেগ প্রসূত বিধিবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ করা অসম্ভব তেমনি মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে যে স্বাভাবিক জৈবিক অনুভব -আকর্ষণ বা জৈবিক কর্মকান্ড সেগুলোকেও কোন বিধিবদ্ধ গন্ডিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ সীমাবদ্ধ করাও একটি প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব্যাপার। মানব সমাজে এইরকম একটি ভয়াবহ  প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব্যাপার হচ্ছে  বিয়ে। আমার এই কথা শুনে শুরুতেই বাঙালি একটা বড় রকম ধাক্কা খাবে জানি। কারণ অজ্ঞ সমাজপতি আর ধর্মের পৃষ্ঠপোষকদের দ্বারা পৃথিবীর ব্যাপী হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত হয়েছে বিভ্রান্ত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং সেই দিশাহারা সমাজ ব্যবস্থার অনিবার্য ফলাফল হচ্ছে দিকে দিকে অবিকশিত মানবগোষ্ঠীর অসুস্থ জনপদের বিস্তার।  বিয়ে হচ্ছে সেই অসুস্থ প্রাচীন সমাজের তৈরি একটি অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর ও  উদ্ভট সামাজিক কুসংস্কার। যৌণতাকে বিধিবদ্ধ করার অপচেষ্টার মধ্যে দিয়ে জীবনকেই একটা অস্বস্তিকর, নোংরা, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কারাগারে বন্দী করা হয়েছে বিয়ে নামক একটা হাস্যকর বিধানের মাধ্যমে। নারী পুরুষের বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের  অনুভূতি সৃষ্টি হয়। পরস্পরের প্রতি বিভিন্ন রকম প্রত্যাশা,আকুলতা, ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার আকাঙ্খা  তৈরি হয়। তৈরি হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তীব্র আবেগ।তবে এই আবেগ এই অনুভূতি অবশ্যই পারস্পরিক পরিপ্রেক্ষিতের নিরিখেই হয় এবং অবশ্যই সেই পরিপ্রেক্ষিতের উপর আবেগ অনুভূতির একটি স্থায়িত্ব কালও তৈরি হয়। কোনভাবেই মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগ  অনুভুতির ব্যাপার সর্বদা একই রকম  বা অপরিবর্তনীয় থাকা সম্ভব নয়।  প্রতিটি নারী পুরুষই  একটা নিজস্বতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে এবং সেই নিজস্বতা ও সতন্ত্রতা নিয়েই তার মনো-দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।একের সাথে অন্যের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, রুচি অভিরুচি,অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত পার্থক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নারী পুরুষ যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন এইসব পার্থক্য ছাপিয়ে তাদের মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠে কিছু হরমোন। মস্তিষ্কের থেলামাস থেকে রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ডোপামিন, নরেপিনেফ্রিন,অক্সিটোসিন, ভেসোপ্রেসিন ও সেরোটোনিন নামের কিছু হরমোনের নি:সরণ জনিত কারণ নরনারীর মধ্যে, প্রেম,ভালবাসা,পারস্পরিক তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঘটে থাকে এবং এই হরমোনগুলোর নি:সরণের পরিমাণ নারী পুরুষের সম্পর্কের শুরুতে যেমন থাকে সময়ের সাথে তেমনটি আর থাকেনা।নানাবিধ কারণে হরমোনের নি:সরন কমতে থাকে।তখনই সম্পর্কের মধ্যে আকর্ষণের মাত্রা কমতে থাকে এবং পরস্পরের মধ্যে পছন্দ অপছন্দের দ্বন্দ্ব, রুচি অভিরুচির সংঘাত বাড়তে থাকে। হরমোনের কারণে তীব্র আকর্ষনের পর্যায়ে পরস্পরের ব্যক্তিগত ত্রুটি বিচ্যুতগুলো চোখে না পড়লেও হরমোনের কমে যাওয়ার পর্যায়ে এসে পরস্পরের ভুল ত্রুটিগুলো পরস্পরের কাছে খুব সহজেই ধরা পড়তে থাকে। তখন একে অন্যের কাছে ক্রমাগত বিরম্বদায়ক একজন সঙ্গী হয়ে উঠে এবং খুব দ্রুতই সবাই এই ধরনের একগুঁয়ে, বিরক্তিকর সঙ্গীর সঙ্গ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষের ভাললাগার বিষয়টি অত্যন্ত সংগত কারণেই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু মুর্খ সমাজপতি, ধর্মপতিরা অস্থায়ী একটা মনো-দৈহিক বিষয়কে বিয়ে নামক একটি সম্পর্কের ফ্রেমে বন্দী করে চিরস্থায়ী করার একটা অপচেষ্টা করে সেই অপচেষ্টাকেই সামাজিক বিধানরূপে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। যখন প্রতিটি স্বামী - স্ত্রী  এই ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তখনই সামাজিক বিধান এসে তার সামনে প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর তুলে দাঁড়ায়। যেহেতু সমাজ স্বামী- স্ত্রী নামক এই সম্পর্ককে একটা অনস্বীকার্য বাধ্যতামূলক বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে সুতরাং 

No comments:

Post a Comment

আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর

 আলোর ঝিলিক  শাহজাহান কবীর  এই যে শনিবার  তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ--  বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি  দুলছি নিরর্থক...