Saturday, April 15, 2023


 হায়রে বাঙালী  

  শাহজাহান কবীর 
বাঙালী স্বভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভালবাসার তীব্র আবেগ। তারা ভালবাসাকেই সবচেয়ে বেশী ভাল বাসে। অথচ কি নিদারুণ পরিহাস- বাঙালীকে আমরণ বসবাস করতে হয় ঘৃণার মধ্যে। যে ঘৃণা তারা সহ্য করতে পারেনা সেই ঘৃণাই হয়েছে বাঙালীর নিত্যদিনের চর্চা। অতি তুচ্ছ কারণে বাঙালী তার পাশের মানুষটকে ঘৃণা করে। কারণ পাশের মানুষটি  অন্য ধর্মের লোক,অথবা একই ধর্মের লোক হলেও যদি লোকটি ধার্মিক না হয়  অর্থাৎ  সে যদি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন না করে তাহলেই সে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে। মুসলমান সম্প্রদায় এই ঘৃণার কাজটি খুব আগ্রহ নিয়ে করে। কারণ তাদের ধর্ম গ্রন্থে ইসলাম  ব্যতীত  অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের অপবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আটানব্বই নম্বর সুরার সাত নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস না করে অন্য ধর্মে বিশ্বাস করবে তারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। সুতরাং  মুসলমান সম্প্রদায় সব সময় তাদের ধর্মের উপর উদারতার একটা তকমা লাগিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সঙ্গত কারণেই তাদের চিন্তায় ,তাদের ব্যবহারে ভিন্ন  সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা আর অবজ্ঞারই প্রকাশ ঘটে সব সময়।সব ধর্মীয় সংস্কৃতিই সব সময়ই ভালবাসার বিরুদ্ধে,, সাম্প্রদায়িক  সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এটাতো নির্জলা সত্য । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মানুষে মানুষ ভালবাসার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন অবস্থান নেয় ইসলাম ধর্ম । বিশেষ করে নারী- পুরুষের প্রেম ভালবাসাতো ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত নারী- পুরুষের ভালবাসা বা যৌন কর্মকে ব্যভিচার বলে গণ্য করা হয়। ব্যভিচারের শাস্তি হলো মাটিতে কোমড় পর্যন্ত পুতে পাথর মারা। তবে দাষীর সাথে যৌন কর্ম করলে তাকে ব্যভিচার বলা হবেনা। দাষীর সাথে যৌন কর্মকে পবিত্র কোরানে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন কি দাসীর সাথে যৌন কর্ম করারা জন্য দাসীর অনুমতিরও প্রয়োজন নেই।পুরুষ মানুষের  ইচ্ছা করলেই তিনি দাসীকে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিবাহ ছাড়া নারী পুরুষ কেউ কাউকে ভালবেসে কাছে আসতে পারবেনা। জিহাদ করে নারীকে দাসী বানিয়ে যৌনতা করতে পারবে।এমন কি পবিত্র কোরান অনুযায়ী পুরুষের মন চাইলে যে কোন নারীকে কিছু পয়সা দিয়ে ২/ ৪ দিনের জন্য অস্থায়ী বিয়ে করে ফেলতে পারবে। আর বিয়ে না করতে পারলেও যদি উত্তেজনার বসে কোন নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করে ফেলে তাতে সমস্যা নেই নারীটিকে যৌনতার পারিশ্রমিক হিসাবে কিছু টাকা দিতে হবে।তবে তবে কোন নারীর সঙ্গে পীরিত করে যৌনাচার করা যাবেনা।তাহলে ব্যভিচার হয়ে যাবে।  পয়সাপাতি দিয়ে কোআর মুসলমান ব্যতিত কোন পুরুষ মানুষ অন্যকোন ধর্মের পুরুষ মানুষের সাথে ভাতৃত্বের বন্ধন বা কোন প্রকার সুসম্পর্ক রাখতে পারবেনা। ইসলাম ধর্মের বিধান বাঙালী শিশু বিশেষ করে মান শিশুর জ্ঞান হওয়ার পরই তার পরিবার থেকে ধর্মীয় বিষয়ে একটা বিশেষ যে ধারণা পায় তা হলো - তার ধর্মটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। অন্য ধর্মগুলো একেবারেই বাজে জিনিস। অন্যান্য ধর্মের মানুষ একেবারেই নিম্নমানের মানুষ। পরিবারের পর তার শিক্ষালয় তার আর ভজনালয় প্রতিটি মুসলমান শিশুর মনে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত করে দেয়। শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারণা মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে  এক উচ্ছৃঙ্খল অহংকারর জন্ম দেয় আর এই অহংকার ই তাকে ঘৃণা করতে শেখায়। এক কথায় পরিবার,সামাজিক  ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মের মাধ্যমে  মুসলমানদের ঘৃণা শেখানোর দায়িত্ব নেয়। সংখ্যালগু হওয়ার কারণে হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায় গুলোর এধরণের ঘৃণার সংস্কৃতি খুব একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পায়না। সে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের ঘৃণার বিপরীতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে যে পালটা ক্ষোভ বা অসন্তোষের সৃষ্টি হয়  সেটি বাস্তব কারণেই অপ্রকাশিত থেকে যায়। অবশ্য নিজেদের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই ধরনের বিপজ্জনক অহংকার বোধের ধারণা অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুলো থেকেই তারা পায়না যতটা মুসলমানরা পায়।বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক  পেশাদার ধর্মীয় বক্তা  রয়েছে যারা মুসলমানদের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার ক্রমাগত ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে বেড়ায় সেই সঙ্গে এইসব বক্তারা মুসলমানদের মধ্যে  অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে  তোলার ক্ষেত্রেও বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। শতকরা নব্বই ভাগ পরিবারের  শিশুরা তাদের পিতা- মাতার কাছ থেকে শিক্ষা পায় যে,কেবল তাদের ধর্মটাই  জগতে টিকে থাকার উপযুক্ত । অন্যান্য ধর্মগুলো থাকাই উচিত নয়। অন্য ধর্মের লোক মানেই অচ্যুত, নিকৃষ্ট। শিশু মনে নিত্যদিন  অন্যান্য  সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির এই এই অপপ্রয়াস জাতীয় জীবনে সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ বাঙালীর জাতীয় সংস্কৃতির অংশ নয়,এই বিদ্বেষ মূলত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালীর স্বভাবের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।  বেলা শেষে বাঙালী যখন নিজের দিকের তাকায়,নিজের আন্তরিক অবস্থা অনুভব করে তখন দেখতে পায় তার বুকের ভিতর হাহাকার করছে ভালবাসার তীব্র আকাঙ্খা। 

No comments:

Post a Comment

আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর

 আলোর ঝিলিক  শাহজাহান কবীর  এই যে শনিবার  তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ--  বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি  দুলছি নিরর্থক...