Thursday, March 30, 2023

হায়রে আমার বিবর্ণ বাংলাদেশ ! ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছ তুমি কোন বিবরে ?



 হাহুতাশ করছিনা,হতাশায়ও আক্রান্ত হচ্ছিনা।আগামীর জন্য  বড় রকমের প্রত্যাশা আর দৃঢ় প্রত্যয় সামনে রেখেই বলছি - বাংলাদেশ এখন বড় বেশী অসুস্থ, বাংলাদেশের কণ্ঠনালী ভীষণভাবে আক্রান্ত, নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের। যন্ত্রণায় হাত- পা ছুড়ছে বাংলাদেশ -ছটফট করে মরে যাচ্ছে বাংলাদেশ।  বাংলাদেশের জীবনধারা শুকিয়ে গেছে, জীবনের গভীরে  প্রাণের প্রবাহ ভীষণরকম স্তব্ধ হয়ে গেছে,জড়পদার্থের মত নিশ্চল নীরবতায় ঝিমিয়ে পড়েছে বাংলার অন্তরভূমি। বাংংলাদেশের পল্লী, নগর, বন্দর সব জায়গায় নেমেছে অসুন্দরের আদিম অন্ধকার, সৌন্দর্যের খরায় পুড়ে যাচ্ছে বাংলার  শ্যামল প্রান্তর।  নিবিড় বনানী ভয়ার্ত শিশুর মত চিৎকার করছে প্রাগৈতিহাসিক বন্য হিংস্রতার পৈশাচিক চিৎকারে। গ্রামগুলোতে নেই পাখির কলরব। মসজিদ থেকে ভেসে হাজার হাজার মাইক্রোফোনে উন্মাদ ধার্মিকের ভয়ংকর চিৎকারের বিকট শব্দে শান্তির নীড় ছেড়ে দেশান্তরি হচ্ছে ভীত বিহঙ্গের ঝাঁক। পাখিহীন প্রখর মমতাহীনতায় হাহাকার করছে বাংলার বন বনানী, বাড়ীর পাশের মায়াময় বাঁশ বাগান, স্নেহময় গাছগাছালির পল্লবিত নিবিড় ছায়া। বাংলার রাতগুলো নি:শব্দ রোদনে কাঁদছে বিরামহীন। রাতের নির্মল বুকে এখন আর স্পর্শ করেনা বাউলা গানের মরমিয়া সুর !  বাঁশের বাঁশির  বিরহবিধুর  উদাসী সুরের মূর্ছনায়।আকুল হয়ে উঠেনা জোসনামাখা অবারিত প্রান্তর।  শীতের রাতগুলো সীমাহীন যন্ত্রণায় মুখথুবড়ে পড়ে থাকে। যাত্রার কনসার্ট,  উকিল মুন্সীর বিরহী বাউলিয়ানা ,জালাল উদ্দিনের  ভাটিয়ালি, আব্বাস উদ্দিনের 


ভাওয়াইয়া, আব্দুল আলীমের পল্লীগীতি , শাহ আব্দুল করিমের জীবনমুখী গান,আবেদ আলীর দেহতত্ত্ব,মুজিব পরদেশীর বিচ্ছেদী সুর আরও অগণিত নাম না জানা বাউল -বয়াতির বেহালা,আর দুতারার সুরের জন্য  ছটফট করে পৌষ মাঘের কুয়াশাভেজা হিমেল হাওয়া। শীত রাতগুলোর বুকে আজ ধর্ম ব্যবসায়ীদের ওয়াজ মাহফিলের দানবীয়  হুংকার ।চৈত্র নিশির চাঁদনী রাতের দক্ষিণা বাতাসে একদিন ভেসে বেড়াতো প্রেম প্রত্যাশী পল্লী তরুণদের হৃদয় উজার করা বাঁশের বাঁশির ব্যকুলতা ভরা সুর।মোল্লাতন্ত্রের সাজানো পারলৌকিক ভয়ের ভুত আজ চৈতী রাতের চাদনীপসরে  নামায় প্রেতপুরীর ভয়ার্ত নিস্তব্ধতা। গ্রামীণ  জনপদের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে অপবিশ্বাসের আদিম অন্ধকার তার কালো ছায়ার বিস্তার ঘটিয়েছে নাগরিক জীবনের সর্বত্র। স্কুল,কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলো আজ বিপজ্জনকভাবে আক্রান্ত মৌলবাদের দুরারোগ্য ব্যাধিতে । বড় বড় সার্টিফিকেট নিয়ে নামীদামী শিক্ষালয় থেকে বেরিয়ে আসছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, জজ, ব্যরিস্টাররূপে  মহামুর্খ  একটা প্রভাবশালী শ্রেণী।এদের উপরের লেবাস কাঠমোল্লাদের মত না হলেও চিন্তা- ভাবনা, মন- মানসিকতায় এরা কাঠমোল্লার চেয়েও অধিকতর ভয়াবহ  ধর্মান্ধ। বাংলার ঘরে ঘরে নারী- পুরুষ নির্বিশেষে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই আজ ধর্মান্ধতার কালব্যাধিতে আক্রান্ত। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এরা মসজিদে যায়, এরাই ঘুষ খায়, এরা ধর্মের ধব্জা ধরে,এরাই দুর্নীতি করে। এরা নামাজ পড়ে এরাই বাজার সিন্ডিকেট করে। এরা ধর্মরক্ষার স্লোগান তুলে এরাই গণ মানুষের অধিকার হরণ করে। এরা জিহাদের হুংকার দেয়, এরাই ধর্ষন করে- বলৎকার করে। সোনার বাংলার দশ দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে এদের পরাক্রমশালী শক্তি। এরা শাসকগোষ্ঠীর ঘাড়ে বসেছে সিন্দাবাদের ভূতের মত। এদের কালো হাতের থাবায় নিয়ন্ত্রিত হয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সোনার বাংলার সবটুকু গ্রাস করে নিচ্ছে এদের লোলুপ লালায়িত ভয়ংকর জিহবা।  এদের পৈশাচিক ফুৎকারে একে একে নিভে যাচ্ছে সকল সম্ভাবনা প্রদীপ।মরে যাচ্ছে  - আমার প্রাণের জন্মভূমি! নিদারুন নির্মমতায়, মর্মভেদী নি:শব্দ রোদনে জীবন বাঁচানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় হাহাকার করছে আমার সোনার বাংলা!  জাগো,জেগে উঠো সবাই, মুর্খতা আর অজ্ঞতার দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আস হে নতুন প্রজন্ম  ,  লাখ শহীদের সোনার বাংলাকে যেকোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে আমাদের !  বিবর্ণ বাংলাকে নতুন করে বর্ণীল করবো আমরা লাল সবুজের  রঙে রঙে।

Monday, March 27, 2023

বিচার ( নাটিকা) শাহজাহান কবীর


 কুশীলব 

আসামী -১,  আসামী -২, আসামী-৩, আসামী-৪, আসামী-৫, কাজী, পেশকার ও রাষ্ট্রপক্ষের উকিল। 
-----------------------------------------------------------------
                       প্রথম দৃশ্য 
(আসামীগণ কাঠগড়ায় বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে)। 
কাজী এসে আসন গ্রহণ করলেন।) 

পেশকার - বিচারিক মামলা শুরু হইতেছে । আসামী নম্বর - ৫
আসামী - ৫ : হাজির হুজুর 

কাজী - আফনের নামে অভিযোগ হইল আফনে বাজারের জিনিসপত্র আটকাইয়া রাইখা মানে অবৈধ ভাবে মজুত কইরা বাড়তি দামে বাজারে ছাড়ুইন। বাজার সিন্ডিকেট করুইন । এই কাম করুইন ক্যারে? 

আসামী- ৫ : হুজুর, আমাগোরে তো কেউ বাধা দেয় না,ধরেও না।হেইজন্য এই কাম করি।  আমারতো অহনো বিশ্বাস হইতাছেনা যে আমি ধরা খাইছি।  

উকিল- হুজুর, এই লোক বাজার সিন্ডিকেটের লিডার। 
এর কঠিন সাজা হওয়া দরকার। 

কাজী- হেইডা বুজ্জি। কিন্তু হের বিষয় জাইন্যাও যেহেতু  প্রশাসন হেরে আগে  কোনদিন ধরে  নাই, তাইলে বুঝতে অইব আইজ ভুল কইরা ধইর‍্যালছে বুজ্জুইন? এর পরে? 

পেশকার :আসামী নম্বর - ৪

আসামী- ৪ : হাজির হুজুর 

কাজী- আফনের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওনের অভিযোগ।  রাজ্যের কর্মচারী হইয়া ঘুষ খাইন ক্যারে?  

আসামী -৪ :  হুজুর বিশ্বাস করেন,ঘুষ একটা অতি উপাদেয় খাবার বইলা আমি জানি। ঘুষ খাওয়া যে একটা অপরাধ সেইডাতো একটা দিনও বুঝতে পারি নাই। রাজ্যের  শতকরা নিরানব্বই ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীইতো ঘুষ খায় হুজুর।  সবাই যে কাম করে হেইকাম যে  অন্যায়, হেইডা ক্যমনে বুজুম হুজুর ? 

উকিল- হুজুর, রাজ্যের কর্মচারীদের বেতন এখন  তিন গুণ করা হইছে। তারপরও এরা ঘুষ খায়। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার । 

কাজী- আফনে এইতা কিতা কইন ওহিল সাইব। হুইলাইন না, এইলায় কি কইলো। রাজ্যের শতকরা নিরানব্বই জন কর্মকর্তা কর্মচারীই ঘুষখোর। নিরানব্বই জনরে সাজা দিয়া কারাগারে পাডাইলে, রাজ্যের কাম করবো ক্যালা? পরের মামলা ?  

পেশকার- আসামী নম্বর - ৩

আসামী -৩ : হাজির হুজুর  

কাজী- আফনের বিরুদ্ধে ভিকটিমরে ধর্ষণের অভিযোগ। ধর্ষণ করতে গেছুইন ক্যারে? 

আসামী- ৩ : কি করতাম হুজুর ?  পকেট ভরা টেকা,চোখ ভরা খিদা,শইল ভরা খিদা, চোখ দিয়া মনে মনে আর কয়দিন ধর্ষণ করণ যায়। অধৈর্য হইয়া হেষে বাস্তবে ধর্ষণ করছি।

উকিল -  হুজুর, ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ বন্ধ করতে হলে এইসব ধর্ষকদের সাজা হওয়া দরকার। 

কাজী- হেইডাতো বুজলাম উহিল সাইব।কিন্তুক এই যে কইলো খিদা। খিদার কিতা করবাইন? আমার বিবেচনায়  বেশীরভাগ পুরুষই ধর্ষক। কেউ মনে মনে ধর্ষণ করে কেও  হাচাহাচাই ধর্ষণ করে। পরে ক্যালা? 

পেশকার : আসামী- ২ 

আসামী-২ :  হাজির হুজুর। 

কাজী- আফনে চুরি করছুইন ক্যারে ? 

আসামী- ২ : হুজুর,ছোটবেলায় অন্য কিছু করণের ইচ্ছা আছিল বড় হইয়া  যহন দেখলাম ঘরে ঘরে নানান ধরনের চোর  তহন ভাবলাম এইডা আমাগো জাতীয় পেশা। সেই জন্য এই পেশাকেই-

উকিল-হুজুর, চুরির শাস্তি হইল হাত কর্তন। এর হাত কর্তন করলে অন্যান্য চোররা চুরি করতে ভয় পাবে।

কাজী- এইতো একটা বে- আন্দাজে কথা কইলেন।চুরির জন্য যদি হাত কাটনের আদেশ দেই তাইলে পুরা দেশ ভইরা যাইব হাতকাটা মানুষে। চিন্তা করছুইন বিষয়ডা?  পরের মামলা? 

পেশকার - আসামী - ১

 কাজী-  আপনের বিরুদ্ধে কোন ধারায় চার্জ গঠন অইল তাতো  উল্লেখ নাই। এইডাতো বড় আচানক মামলা। ধারা ধুরা কিছুই উল্লেখ নাই খালি লেহা আছে আপনি বিশ্বাস করেন না। ওহিল সাইব, এই আসামীর ঘটনা কি? 

উহিল- হুজুর, এই আসামী বিশ্বাস করে না। 

কাজী- বিশ্বাস করে না হেইডাতো বুজ্জি ?  কিতা বিশ্বাস করে না  হেইডা কওহাইন। 

উকিল- হুজুর , এদেশের শতকরা একশ জনই যা বিশ্বাস করে এই লোকে তাই বিশ্বাস করেনা। 

কাজী - তাইলেতো এই লোক একশ জনের বাইরের লোক। আইচ্ছা, উহিল সাইব, বিশ্বাস যে করে না এইডা কোন ধারার অপরাধ ? 

উকিল- এইটা হুজুর অন্ধ ধারার অপরাধ । বাংলাদেশে বর্তমানে এর চেয়ে বড় কোন অপরাধ নাই। 

কাজী - ও এতক্ষণে বুঝতে পারতাছি , এই যে,আপনি তো মিয়া মারাত্মক লোক। বেয়াক মাইনসে যা বিশ্বাস করে আপনের হেইগুলা বিশ্বাস করুইন্যেয়া ক্যারে?  জবাব দেওহাইন। 

উকিল- হুজুর, সে কারো সঙ্গে কথা বলেনা। 

কাজী- কথা বলেনা ক্যারে ? 

উকিল- তার হিসাবে এদেশে কথা বলার স্বাধীনতা নাই। এই দেশের মানুষ তার কথা শোনার যোগ্য না। এইদেশের শতকরা নিরানব্বই জন মানুষই নাকি মানসিক  প্রতিবন্দী। প্রতিবন্ধীদের সাথে কিসের কথা?  এই জন্য কথা বলে না। 

কাজী- হে না বুলে কথাই কয় না। তাইলে এইসব কথা কে কইলো ? 

উকিল- এই কয়ডা কথাই সে কইছিল।হেরপর আর কিছু কয় না। খালি মাঝে মধ্যে কয় - আমি বিশ্বাস করিনা। 


কাজী- বুজতাম পারছি। হে খুবই মারাত্মক লোক। তার সাজা হওয়া খুবই প্রয়োজন। আইচ্ছা, শুনেন, বিশ্বাস না করার অপরাধে এক নম্বর আসামীরে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হইল। বাকী সব আসামী খালাস। সবাইরে ছাইড়া দেন, আর এক নম্বরে আসামী জেলে যাইব।

 আসামী- ২ : হালারপো হালা,তোর এত্ববড় সাহস!  এইদেশে থাকবি অথচ বিশ্বাস করবি না, আইজকা তরে পাইছি। 

আসামী- ৩:  হারামির বাচ্চা, সব মানুষে বিশ্বাস করবো, তুমি কোন চান্দু যে  তুমি  বিশ্বাস করবা না ? বিশ্বাস না করার অধিকার তোমারে দিছে ক্যাডা?আমরা এই দেশে কোন অবিশ্বাসী থাকতে দিমুনা। 

আসামী- ৪: অত কথার দরকার কি এই হালারে যহন হাতের কাছে পাইছি তখন মুখে কথা কি? কথা হইবো হাতে।একটা চাপাতি থাকলে সুবিধা হইতো। 

আসামী- ৫: ধর শালারে । ( সবাই মারতে যায়)

কাজী- এই- এই - আফনেরা আইন নিজ হাতে তুইল্যা নিতাছুইন ক্যারে ? 

আসামী- ২ : স্যার,দরকার পড়লে আমরা আরও কিছুদিন জেল কাটুম তাও এই অবিশ্বাসী শালারে মাইরা একটু পূণ্য কামাইতে চাই। 

আসামী-৩,৪,৫ : হ পূণ্য কামাইতে চাই। ( সবাই।আসামী - ১ কে পেটাতে থাকে এক) 

কাজী- উহিল সাইব, ঘটনাটা কেমুন হইতাছে বুজতাম পারতাছিনা। বিচারকের সামনে দলবদ্ধ আসামী কতৃক এক আসামীকে গণধোলাই -
উহিল-  বিচারের ইতিহাসে এমন চমৎকার বিচার আর হয় নাই হুজুর। দলবদ্ধ আসামীদের সাথে  একজন অবিশ্বাসীকে সাজা দেয়ার জন্য বিচারক হিসাবে এমন ন্যায়বিচারের জন্য আপনার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। 
কাজী- মাসাল্লা কওহাইন ওহিল সাইব।এইসব কথার শেষে মাসাল্লা কইতে অয়। 
উকিল- মাসাল্লা ! 


































বাঙালি কতটুকু ধার্মিক ?


শাহজাহান কবীর। 

বাংলাদেশের গত দুই / তিন দশকের  বাস্তবতা যদি আমরা একটু মোটাদাগে মূল্যায়ন করি তাহলে বলা যায় যে ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিস্তার,ধর্মীয় সন্ত্রাস বা রিলিজিয়াস  রেসিজম এখন প্রবল ভাবে শক্তিশালী। শুধু লেবাসধারী কিছু মোল্লা নয়, স্কুল কলেজ পাশ করা,ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আচরণ ও মনোভাব এখন কাঠমোল্লাদের মতই। এক কথায় বলা যায় বাংলাদেশের সাধারণ জনতার অধিকাংশই এখন পরমত অসহিষ্ণু ধর্মান্ধ ।তবে এই বাস্তবতার গভীরে যদি আমরা তাকাই এবং সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি সেই সঙ্গে আবহকালের বাঙালী জাতীর সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে মিলিয়ে মূল্যায়ন করি তাহলে আমরা যে সত্যটি দেখতে পাব সেটি হচ্ছে বাঙালী আসলে ধর্ম প্রবণ জাতি  নয়, নিচক পূজা অর্চনা বা ইবাদত প্রবণ জাতী নয়। বাঙালীর আন্তরিক চরিত্রে রয়েছে উৎসব প্রবণতা,আনন্দ প্রবণতা । একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলেই আমরা দেখবো বাঙালী তাদের ধর্মের আনুষ্ঠানিক বিষয়গুলোর সাথে উৎসবের একটা আবহ সৃষ্টি করতেই পছন্দ করে। শুধুমাত্র  ঈশ্বর, দেবতা,ভগবান বা আল্লাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আনন্দবিহীন কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাঙালী করতে চায়না।সেজন্যই আমরা হিন্দুদের পূজাপার্বণে বাদ্য-বাজনা, নৃত্যগীত ইত্যাদি সহ উৎযাপন করতে দেখি। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলোতে যতই ভাব গাম্ভীর্যের কথা বলা হউক না বাস্তবতা হলো ভাবগাম্ভীর্যের বদলে তারা উৎসবের আমেজই তৈরী করতেই আগ্রহী। পীর ফকিদের মাজারে আধ্যাত্মিকতা সাধন করার চেয়ে নেচে গেয়ে পীরের গুণকীর্তন করতেই ভক্তরা বেশী পছন্দ করে।   রমজানের রোজাকে বলা হয় আত্মশুদ্ধি বা সকল বিষয়ে সংযম পালন করার মাস অথচ বাস্তবে আমরা দেখি ঈদতো বটেই, ইফতার, সেহেরি, তারাবী  নামাজ প্রতিটি বিষয়ে অতিরঞ্জিত আয়োজনের মাধ্যমে  একটা অনন্দ,ফূর্তি  বা উৎসবের আবহ সৃষ্টি করা হয়। কে কতটুকু আত্মসংযম করলো সেইদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ না করে কে কোন পোশাকটি ক্রয় করবে কে ভাবে কত ভাল করে ইফতারের আয়োজন করবে, সেহেরিতে ভূরিভোজনের জন্য আরও কি আয়োজন করা যাবে,রোজার মাসকে  কিভাবে আরও আনন্দময় করা যাবে সেই চিন্তা আর আয়োজনেই রমজান মাস কাটে বাঙালী মুসলমানে।শবে বরাতের রাতে ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ইবাদত করার চেয়ে বাঙালী মুসলমান বেশী মনোযোগ দেয় রুটি হালুয়া আর মুখরোচক খাবার তৈরীতে। তরুণ সমাজ তো শবে বরাতে পটকা ফোটানো আর আতসবাজীতেই ব্যস্ত সময়  কাটায়,পুলিশ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও শবেবরাতের পটকা ফোটানো বন্ধ করতে পারেনা। ভবিষ্যতেও পারবেনা কারণ যে পথে আনন্দ নেই বাঙালী  সেই পথে যেতে চায়না। এটাই মূলত বাঙালী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য । বাঙালী আসলে ধর্মের প্রতি আন্তরিক ভাবে আকৃষ্ট কোনদিনই ছিল না,এখনো নয়।  ধর্মান্ধতা, ধর্মভীরুতা,সাম্প্রদায়িক উগ্রতা এগুলো বাঙালির উপর ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মীয় রাজনীতি আর অপরাষ্ট্র ব্যবস্থা কতৃক আরোপিত একটা উপরি বা প্রচলিত কথ্য ভাষায় বলতে গেলে আলগা চরিত্র ।আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে, যথাযথ শিক্ষার অভাবে সহজ সরল বাঙালি উচ্চতর মানসিক অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনা বিধায় ধর্মে উল্লেখিত অলৌকিক শাস্তিকে তারা ভয় পায়, ধর্মে উল্লেখিত লোভনীয় অফার গুলোর প্রতি তাদের লোভও হয়। ধর্ম ব্যবসায়ীদের তৈরি নিত্যদিনের  ধর্মীয় সামাজিক চাপের কারণে বাঙালি ধর্মভীরু হতে সাম্প্রদায়িক হতে, উগ্রবাদী হতে নিজের অজান্তেই আসলে বাধ্য হয়,বাধ্য হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে ঔপনিবেশিক  শাসনের সময়ই বাঙালির উপর একটি ধর্মীয় উগ্রবাদী চরিত্র আরোপিত করার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়  সেই অপশক্তির নগ্ন উল্লাস দেখেছে বিশ্ববাসী । মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়েও তারা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার  মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক  অন্ধকারের রাজত্ব পূণরায় কায়েম করতে সক্ষম হয়। ১৯৭২ এর প্রণীত সংবিধানের মূল চারটি নীতির একটি  ছিল সাম্প্রতিক সম্প্রতি বা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা । ১৯৭৭ এ পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান  সেই নীতিকে ধবংস করেন।আবারও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বাঙালীকে ধর্মান্ধ বানাতে উঠেপড়ে লাগে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশকে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান বানানোর মিশন চালিয়ে যেতে থাকে অবলিলায়। আরেক সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ  রাষ্ট্র ধর্মের মত ব্যাপার ঘটিয়ে  সেই মিশনের সফলতাকে আরো অনেক ধাপ এগিয়ে দেয়। এভাবে পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সুযোগ সন্ধানী ক্ষমতালিপ্সু  শাসকদের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে  সৃষ্ট  হয় ধর্মান্ধতা প্রচার ও প্রসারের অনুকূল অবস্থা। এই অবস্থা এমনই শক্তিমত্তা অর্জন করে যে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা অনগ্রসর  জনগোষ্ঠীর চিন্তায় হিপনোটিজমের মত একটা শক্ত  ধর্মীয় চাপ ও প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এবং এই চাপে সবচেয়ে  বেশী প্রভাবান্বিত হয় তরুণ সমাজ। এই তরুণ সমাজই পরবর্তীতে সমাজের সর্বস্তরে ধর্মান্ধতাকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। প্রৌঢ় সমাজ তরুণদের ধর্মের বিষয়ে এতটা আগ্রহী দেখে বিষয়টাকে সুনজরে দেখতে থাকে এবং নিজেদের অন্তরের প্রকৃত অবস্থাকে অস্বীকার  না করেও তারা অধিকতর ধার্মিক হওয়ার একটা উপরি চেষ্টা করার তাগিদ অনুভব করতে থাকে।  এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সহজেই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যায় বর্তমানে বাংলাদেশে যে ধর্মীয় উগ্রতা আমরা লক্ষ্য করছি সেটি বাঙালির প্রকৃত চরিত্র নয় মোটেও বরং দীর্ঘদিনের দেশী বেদেশী মৌলবাদী অপশক্তির বিরামহীন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এদেশের অজ্ঞ জনতার উপর আরোপ করা একটা  ক্ষণস্থায়ী অবস্থা বিশেষ মাত্র। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে রেষারেষি, হিংসা, বিদ্বেষ,  অশান্তি সৃষ্টি করার মত মানসিকতা সাধারণ জনতা কখনোই লালন করতে ইচ্ছুক নয়।  তাই বাঙালির অতি ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক আচরণ  নয়। তাদের চারদিকে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যে অতি ধার্মিক হওয়ার একটা প্রতিযোগিতা শুরু  হয়েছে।প্রতিটি ব্যক্তিই সে যত নষ্ট  মানুষই হউক ধর্মের স্বপক্ষে দুটি কথা বলে নিজের গায়ে একটা ধর্ম প্রেমের তকমা লাগাতে চায়। এই ধার্মিক সাজার কর্মটি যে একটা আত্ম প্রবঞ্চনা এটি কিন্তু সবাই জানে তবুও সামাজিক অবস্থান ঠিক রাখার জন্য এই প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেনা। সমাজের আরেকটা শ্রেণী আছে যারা নানা রকম দুস্কর্ম করে  অর্থনৈতিক ভাবে, রাজনৈতিক ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রতিনিয়ত নানান অপকর্ম করে যাচ্ছে, এরা নিজেদের অপকর্মকে ঢেকে রাখার জন্য ধর্ম পালনের প্রতি অতি উৎসাহী হয়।এই প্রভাবশালী শ্রেণীটির কারণে সাধারণ জনতা ধর্মীয় বিষয়ে আরও একটু বেশী বিভ্রান্ত হয়।  এই অবস্থার মধ্যে বসবাস করতে করতে কখনো তারা এটিকেই সত্য বা উচিত  অবস্থা বলেও ভাবতে থাকে। এই ভয়াবহ অবস্থার মাঝেও বাঙালি তার চিন্তা- চেতনার আসল রূপ ভুলে যায়নি। সে কারণেই ধর্মীয় প্রতিটি বিষয়কে তারা অবশেষে উৎসবেই পরিনত করে। ঈশ্বরকে নয়,ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে মুলত তারা নিজেকেই খুশী রাখতে চায়,ধর্ম পালনে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি নয় -আত্ম সন্তুষ্টিই খুঁজে। বাঙালি  পূজা বা ইবাদতে প্রকৃত নয়,শুদ্ধ নয়,সত্য নয়। ধর্ম পালনে বাঙালি মূলত আত্ম প্রবঞ্চক ও ভন্ড। বাঙালির শুদ্ধ ও সত্যনিষ্ঠ পরিচয় ফুটে উঠে উৎসবে - আনন্দে। বাঙালির উপর যতই ধর্মীয় আবেগ চাপানো হউক,একটি  সুরেলা গান শুনলেই বাঙালি সবকিছু ভুলে গানটিই উপভোগ করবে। শহরের বাঙালি ব্যন্ডদলের কনসার্ট শুনলেই নেচে উঠবে, জারি, সারি,ভাটিয়ালি, বাউল গান আর যাত্রার কনসার্ট শোনামাত্রই গ্রামের বাঙালির শরীর দুলে উঠবেই। হাজারো ধর্মীয় বোঝা মাথার উপর চাপিয়ে দিলেও উৎসব প্রবণ বাঙালিকে উৎসবের আকর্ষণ থেকে ফেরানো  যাবেনা। এখানেই মূলত প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পরাজয় আর আমাদের জন্য নতুন  প্রত্যাশার জায়গা। যদি আমাদের শিক্ষা  ব্যবস্থাকে আধুনিক ও সময় উপযোগী করা হয়। শিক্ষা গ্রহণের প্রতিটি ধাপে যদি কর্মমূখী বিষয়ের মত,সাহিত্য,  সংগীত,চারুকলা, নাট্যকলার মত বিষয়গুলোকে বেশি করে গুরুত্ব দেয়া হয় আর শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতার লোভে ধর্মান্ধতার প্রশ্রয় না দেয় তাহলে অবশ্যই একদিন বাঙালির অতি ধার্মিক সাজার এই ক্ষণস্থায়ী মুখোশটি খসে পড়বে, বাঙালি এগিয়ে যাবে তার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে । 




Sunday, March 26, 2023

ধর্মীয় অনুভূতির কথা


শাহজাহান কবীর। 

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে একটি   বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি।" ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত"এখন বাংলাদেশে একটি অতি জনপ্রিয় শব্দ অন্যকথায় একটি অতি শ্রদ্ধাভাজন শব্দ। এই শব্দটি আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ধর্মের সমালোচনাকারী বা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মুক্ত আলোচনাকে প্রতিরোধ করার মত কোন যুতসই কথা ঠিক পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ ধর্মে অবিশ্বাস বা নাস্তিককতার আলোচনা বা সমালোচনাকে একটা হীনতম পর্যায়ে চিহ্নিত করার বড় প্রয়োজন ছিল এদেশের জনগণের। আমাদের দেশে জনগণের এইসব প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যে কোন সরকার বা শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই তাদের গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারণ শাসক গোষ্ঠী চিরদিনই  অনগ্রসর জনতার ধর্মীয় আবেগের প্রতি খুবই সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। সেকারণেই যখন মুক্তচিন্তার কিছু মানুষের ধর্ম বিষয়ক আলোচনা সমালোচনাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় বিশাল অনগ্রসর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তখনই আমাদের শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়" অনুভূতিতে আঘাত " শব্দটার প্রসব করে ফেললো আর অন্ধ জনতা নবজাতক এই যুতসই শব্দটাকে কোলে নিয়ে নাচতে থাকলো। শব্দটাকে অতি আদর অতি যত্ন দিয়ে অল্প দিনেই বিশাল বড় করে তুললো। শাসক গোষ্ঠী জনতাকে খুশী করার জন্য এবং মুক্ত আলোচকদের কণ্ঠ  স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য " ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত " এর বিষয়টি নিয়ে একটা আস্ত ফৌজদারি আইনই প্রণয়ন করে ফেললো। এখন বাংলাদেশে ধর্মীয় সমালোচনা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য। ব্যাস যা হওয়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়ে গেল। একটু ভিন্ন চিন্তা, একটুখানি অন্য কথা বলার পথ বন্ধ করে দেয়া হলো। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতি এখন এখন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠলো। অবশ্য যতই তীব্র হউক, এই অনুভূতির শারীরিক অবস্থা একেবারেই ননীর পুতুলের মত। সামান্য বাও বাতাসেও তার গায়ে আঘাত লাগে। অন্যায়,অপরাধ,অবক্ষয় আর দুর্নীতিতে ক্রমাগত তলিয়ে যাচ্ছে দেশ- এ নিয়ে আমাদের কোন অনুভূতিতে বিন্দুমাত্র আঘাতও লাগেনা। বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যদিন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের জীবন দু:সহ করে তুলছে এক শ্রেণীর মুনাফাখোর- কিন্তু এ নিয়ে আমাদের অনুভূতিতে কোন আঘাত লাগেনা। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুণ করা হয়েছে তবুও ঘুষখোরদের যন্ত্রণায় সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, এ নিয়েও আমাদের অনুভূতিতে কোনরকম আঘাত লাগেনা- এসব ক্ষেত্রে জনতার অনুভূতি বড়ই শক্ত ।দিন দিন বেড়েই চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, বলৎকার - অথচ এসব ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতি বড় নীরব,নিস্তেজ, নিরাবেগ কিন্তু  ডারউইনের এভুলেশন থিউরির মত একটা আকর্ষণীয় বিষয় এদেশের জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে চট করেই আঘাত করে ফেলে।কারো কোন নতুন কথা যদি ধর্ম বিশ্বাসের চেয়ে একটুখানি অন্যরকম হয় তাহলে তৎক্ষনাৎ  গরম তেলে পানি পড়ার মত চ্যাত করে ক্ষেপে উঠে জনতার অনুভূতি। হায়রে অনুভূতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি জনমদুখিনী বাংলাকে!   হায়রে আমার করুন বাংলাদেশ! এই অনুভূতিহীন অনুভূতি  কোন গহব্বরের দিকে তোমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে  কিছুই বুঝতে পারছোনা  তুমি ! 


Saturday, March 25, 2023

নাজাতের মাস


শাহজাহান কবীর। 

প্রশ্নকর্তা - ভাইজান, অফিস- আদালতের কর্মদিবসের সময় কমিয়ে দিলেন কি জন্য? 
উওর দাতা-না খায়া থাকিতো, তাই কর্ম থাইকা নিজেরে নাজাত করার জন্য। 
প্রশ্নকর্তা- ঘুষ, দুর্নীতি  এইসব কুকর্ম  এই মাসে বাড়িয়ে দিলেন কেন? 
উত্তরদাতা-  ভাইগো সামনে ঈদ। ব্যপক খরচাপাতি। খরচাপাতির টেনশন থেকে নিজেকে নাজাত করার জন্য। 
প্রশ্নকর্তা - বাজারে জিনিসপত্রের মূল্য এত বাড়িয়ে দিলেন কেন?  
উত্তর দাতা- ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ভাবে নাজাত দেওয়ার জন্য। 
প্রশ্ন- সারা বছর জমে থাকা মানহীন আজেবাজে জিনিস পত্র এই মাসে বাজারে তুলেন কেন?
উত্তর দাতা- মানহীন জিনিস গুলারে গোডাউন থাইকা নাজাত দেওয়ার জন্য।  
 গুলোপ্রশ্নকর্তা - ইফতারে এত ব্যপক খরচাপাতি ব্যপক আয়োজন কি জন্য? 
উত্তর দাতা- এইডা কি বলেন?  সারাডা দিন না খায়া থাকি। মনের মধ্যে খাবারের ইচ্ছা কত আকুলিবিকুলি করে। ইফতারের সময় সেই ইচ্ছাটাকে নাজাত দেওয়ার জন্য। 
প্রশ্নকর্তা - সেহরিরতে এত বিরাট আয়োজন করে ভূরিভোজন  কেন ভাই? 
উত্তর দাতা- ওমা, সারাদিন উপাস থাকুম,খিদা লাগার সম্ভাবনা আছে না। সেই খিদার কষ্ট থাইকা নাজাত পাওয়ার জন্য। 
প্রশ্নকর্তা - ভাই এতকিছুইরে নাজাত করতেছেন, এই জাতির নাজাত হয়না কি জন্য? 
উউত্তরদাতা- আরে ভাই জাতির নাজাত হয়ে গেলেতো নাজাতের এই বাণিজ্য চলবোনা- বুঝেন না কেন? 

 

ঘুমপাড়ানি ছড়া


শাহজাহান কবীর 

বন্ধপুরে পড়েছে দেখো অন্ধ ছড়ার ধূম

জিন্দা খোকা দাও তুমি মুর্দার মত ঘুম

জঠরের ধন মানিক আমার শোন মন দিয়া 

তোমার কচি মগজ খানা রাখিব বান্ধিয়া  

দিনে দিনে শরীর তোমার এত্বো বড় হবে 

মগজ খানা বনসাই হয়ে ছোট্ট হয়ে র'বে

লেখাপড়া শিখে তুমি মস্ত  মূর্খ হবে 

আদি কথা মন্ত্র শিখে  পিছিয়ে শুধু যাবে

সোনা আমার দেখো চেয়ে দিলাম তোমায় খাঁচা 

খাঁচার ভিতর মরার মত হবে তোমার বাঁচা 

আজকে তোমার দুটি পা বান্ধিব শিকলে

সীমার বাইরে ভুলেও যেন কক্ষনো না চলে 

কূয়ার ভিতর থাকি আমার ধোঁয়ার ভিতর বাঁচি

জন্ম থেকেই দুচোখ ভরে আঁধার নিয়ে আছি। 

তুমিও তেমনি বাঁচবে খোকা মান্য কথা মানবে

অন্ধবিশ্বাস যাই বলে তা সত্য বলে মানবে 

আকাশ হলো শক্ত ছাদ তৈরি নানান পাথরে

তারাগুলো ছোট্ট বাতি রাত্রি কালরে দেখোরে 

সূর্য কি প্রতি ভোরে এমনি উঠে পূবে

তার আগেতো পশ্চিমেতে কাদাজলে ডুবে

সূর্যের যেমন নিজের কিরণ চাঁদেরও আছে তাই

কে বলেরে চাঁদের কোন নিজের আলো নাই  

জগত কিন্তু স্থির বিছানা চাঁদ সূরুজই ঘুরে

পাহাড় দিয়ে পেরেক মারা পৃথিবীর বুক জুড়ে 

সেই কারণে তোমায় নিয়ে জগৎ নাহি টলে 

এসব কথাই মানবে তুমি কিতাব যাহা বলে 

মানার ঘোরে তাই খোকারা ঘুমায় চিরকাল 

হয়না দেখা এই পৃথিবীর কেমন করুন হাল। 

Wednesday, March 22, 2023

প্রবলভাবে বেড়ে চলছে অন্ধকার।


শাহজাহান কবীর । 

বাংলাদেশে প্রবল ভাবে বেড়ে চলেছে অন্ধকার।  ধর্মান্ধতা আর মূর্খতায় ভরে যাচ্ছে আমার স্বপ্ন সাধনার সোনার বাংলা। যে অসাম্প্রদায়িক বোধের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধের মত বিশাল এক ঘটনা ঘটেছিল আমাদের জাতীয় জীবনে। সেই বোধ থেকে অনেক দূরে সড়ে এসেছে বাংলাদেশ। এমন কি স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগও ভেসে চলেছে সেই অনাদি অন্ধকারের  গড্ডালিকা প্রবাহের সাথে। তারা রাজনৈতিক স্বার্থে নি:সংকোচে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে এদেশের অনগ্রসর মৌলবাদী মানুষদের। দেশের সংস্কৃতিবান, সচেতন ব্যক্তিরাও বিস্ময়কর ভাবে নীরব দর্শক হয়ে দেখে যাচ্ছেন ধর্মান্ধদের হাত ধরে একটি সম্ভাবনাময় জাতী কিভাবে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সব সময়ই সক্রিয় ছিল কিন্তু  বর্তমান সময়ের মত এত ফুলেফেঁপে ওঠার সুযোগ তারা পায়নি। কিন্তু কেন আর কিভাবে পাচ্ছে তারা নিজেদের এইভাবে অপ্রতিরোধ্য অপশক্তি হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করার?  কারণ গুলোও কিন্তু আমাদের সামনে স্পষ্ট। ১। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষমতা বিস্তার ২। ধর্ম ব্যবসায়ী  চক্রের মাধ্যমে সারাদেশে  যুব সমাজকে কৌশলে ধর্মান্ধ করে তোলার প্রয়াস চালানো। ৩। দেশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্মিলীত অপশক্তির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রবল বিস্তার। ৪। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তোলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। ৫। উগ্রবাদীদের সন্ত্রাস এবং দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাসীনতার জন্য গ্রাম গঞ্জের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাওয়া। ৬। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধর্মান্ধতাকে মহামারীর মত ছড়িয়ে দেয়ার দেশী বিদেশী তৎপরতা। ৭। দেশের নির্বাহী,বিভাগ,বিচার বিভাগ,পুলিশ প্রশাসন সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোতে ক্রমাগত অজ্ঞ আর ধর্মান্ধ ব্যাক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি ৮। সমাজের প্রভাবশালী অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ধনিক শ্রেণী কর্তৃক  নানা ভাবে ধর্মীয় কর্মকান্ডকে সহযোগিতা প্রদান। ৯। দেশ জুড়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ওয়াজ মাহফিল বৃদ্ধি ইত্যাদি। এইসব কারণ গুলো আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চোখের সামনেই দিনের পর দিন অপ্রতিরোধ্য অপশক্তি পরিনত হয়েছে। আর এর ফলে ২০২৩ সালে এসেও একটি অবিকশিত, অনগ্রসর, অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতী হিসাবে  ক্রমাগত পিছনের দিকে হেঁটে যাচ্ছি আমরা । সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন পচন। মানুষের মধ্যে নানারকম বিভেদ,বিভাজন,  হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃনা,রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গনে অবক্ষয়  ঘুষ,দুর্নীতি। মানুষের বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার স্বাভাবিক গতিধারা আজ মৌলবাদীদের উগ্রতার কাছে শৃঙ্খলিত। সবচেয়ে বড় আশংকার বিষয় হলো বাংলাদেশের নিরানব্বই পারসেন্ট মানুষই এখন ধর্মান্ধ মৌলবাদী। সবচেয়ে নিকৃষ্ঠ মানুষ গুলোও এখন প্রবলভাবে ধার্মিক। আল্লাহ নামে, ধর্মের নামে যে কোন ভয়াবহ কান্ড ঘটাতে পারে এমন মমিন নামের হিংস্র ধর্মান্ধ ব্যক্তি শতকরা নব্বইটি পরিবারে এক দুইজন করে আছে। নিজেকে গাল দিলে কিছুই মনে করে না কিন্তু কেউ যদি ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে তাহলে চারদিক থেকে সবাই তার উপর হায়নার মত ঝাপিয়ে পড়ে। কোন নারী যদি সাহস করে একটুখানি নিজের মত চলতে চায় বা অগ্রসর কিছু বলতে চায় তৎক্ষনাৎ সেই নারীকে সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে নোংরা ভাবে আক্রমণ করে ধর্মান্ধ শ্রেণী। এদেশে ঘুষখোর হলে দুর্নীতিবাজ হলে সমস্যা নেই,কেউ এদের ঘৃণা করবেনা। চোর, ডাকাত, কালোবাজারি কিংবা ভয়ংকর সন্ত্রাসী, খুনী হলেও কেউ তোমার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠবেনা,এসব নোংরা মানুষ গুলোর পিছনে জীবন নাশের জন্য চাপাতি নিয়ে ঘুরবেনা ভয়ংকর আততায়ী। কিন্তু  যদি কেউ ধর্ম নিয়ে কোন সমালোচনা করে তাহলে তার রক্ষে নেই। চারদিক থেকে তার দিকে ছুটে আসবে ঘৃণা। তার কাছের মানুষ গুলো মুহূর্তে হয়ে যাবে তার পর।এমন কি তার পরিবার পরিজন ও তাকে ত্যাগ করবে। সরকার, আইন,প্রশাসন কেউ দাঁড়াবেনা ধর্ম নিয়ে সমালোচনাকারীর পাশে।একদিনে সম্পূর্ণ অসহায় আর অরক্ষিত হয়ে উঠবে ধর্মের সমালোচনাকারীর জীবন। এই অযৌক্তিক অবস্থা কি একটি সম্পূর্ণ অসুস্থ বিকারগস্ত জাতির পরিচয় বহন  করে না? আবহমান কালের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কিভাবে তৈরি হলো এই অসুস্থ অবস্থা?আমরা সবাই জানি সবাই চিনি এই পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী অপশক্তিকে। এই অপশক্তির অভয়ারণ্য এখন এখন বাংলাদেশ। এদের প্রতাপে মুক্ত  চিন্তার সকল প্রয়াস  মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। দিনের পর দিন সংকোচিত হয়ে আসছে মানুষের বিকশিত হওয়ার স্বাভাবিক আয়োজন গুলো।  এক অকল্পনীয় অজ্ঞতার গহবরে তলিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই ভয়াবহ পরিনামের মুখোমুখি হবো আমরা। 

Tuesday, March 21, 2023

তাহাদের তিনি

শাহজাহান কবীর 

নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা করলো সেপিয়েন্স 

ফুলে- ফসলে পৃথিবীকে পৃথিবী বানালো তারা

 হাতে হাত মিলালো তারা- হৃদয়ে হৃদয়। 

তারা আকাশের মত বিশাল করলো মানবতা 

তারা মাটির মত মমতাময় করলো পৃথিবীর প্রান্তর

তবু তাদের থেকে কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল

অন্যরকম জীবনের লিপ্সায় অন্যরকম হয়ে গেল

জগৎ সংসার কুক্ষিগত করার নীল নকশা সাজালো

তাদের হাত ধরেই তিনি আসলেন এই উদার জমিনে

তার ভয়াবহ পদযুগল রাখলেন জগতের সরল বুকে 

অত:পর তারা তার সাথে  আরও অসংখ্য পা জুড়ে দিল

অসংখ্য হাত জুড়ে দিল - সাত আকাশ জুড়ে দিল

তাদের হাত ধরে তিনি এক অলৌকিক সাম্রাজ্য গড়লেন

লোভ আর ভয়ের ভয়ংকর এক রাজত্ব শুরু হলো তার 

সেপিয়েন্সের সম্প্রীতির হাত আর থাকলো না

হৃদয়ে থাকলোনা হৃদয়  

মানবতা থাকলো না মানব জমিনে । 

পৃথিবীর ভরে গেল ভন্ড আর ভজনালয়ে

 সুন্দর কিছুই আর থাকলো না। 

থাকলেন তাহারা

থাকলেন শুধু তিনি ! 

তাহাদের তিনি  ! 

Monday, March 13, 2023

প্রতিবন্ধী জাতি

শাহজাহান কবীর। 


স্বাধীনতার অর্ধ শতক পার করেছে এই জাতী কিন্তু জ্ঞানের দিক থেকে তার শৈশব এখনো কাটেনি। বয়স বাড়ছে অথচ বিকশিত হচ্ছেনা - এটা একধরনের প্রতিবন্ধীত্ব। বাংলাদেশে এমন নিদারুণ  এক বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে,এই দেশের পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র, শিক্ষালয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জাতীকে প্রতিবন্ধী করে রাখার  পক্ষে কাজ করে, এই দেশের সংস্কৃতি প্রতিটি অংশই মানুষকে প্রতিবন্ধীত্বকে চিরস্থায়ী করার আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে যে মানুষগুলো বেরিয়ে আসে এরা যেন মানসিকভাবে চরম পর্যায়ের এক বিপজ্জনক প্রজাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। নিরক্ষর মূর্খের চেয়েও ভয়াবহ রকমের মূর্খতায় ডুবে থাকে এই সার্টিফিকেটধারী প্রতিবন্দ্বীরা। সার্টিফিকেটের অহংকার,চালাকি আর চাতুর্যে এরা এমনই পটুত্ব অর্জন করে যে কোন সুস্থ মানুষ এদের সামনে নিতান্ত অসহায় বোধ করতে থাকে।বস্তুত  এদের কারণেই বাঙালী জাতীকে তার প্রতিবন্ধীত্ব থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়না।

 

জ্ঞান ও মুগ্ধতা

 শাহজাহান কবীর 

জানার তৃষ্ণা মানুষকে জ্ঞানী করে।জ্ঞান মানুষকে ক্রমাগত একা করতে থাকে একাকীত্ব মানুষকে দু:খী করতে থাকে। সেই দু: খের গভীরে থাকে এক বিশাল মুগ্ধতা। " আমি কিছুটা জানতে পেরেছি"- এইরকম বোধের  মুগ্ধতা। 

বিপরীত দিকে জানার অনিচ্ছা মানুষকে মুর্খ করে, মূর্খতা মানুষকে ক্রমাগত অসত্যে বিশ্বাসী করে তুলে, বিশ্বাস করে তুলে ধার্মিক আর ধার্মিকতা মানুষকে সুখী করে তুলে। সেই সুখের গভীরে থাকে কেবল অজানার অন্ধকার । 

Saturday, March 11, 2023

তুমি থাকবে সর্বনাশে


শাহজাহান কবীর 

খুব শক্ত হিসাব নিয়েই বসে আছে তোমার এই সমাজ আসামাত্রই হিসাবের অংকে আটকে যাবেই তুমি 

শ্বাস ফেলা মাত্রই তোমার প্রশ্বাস দখল করে নেবে সেই প্রাচীন গন্ধ

চৌদ্দপুরুষের ছড়ানো বদগন্ধ,- সুগন্ধ হবে

 তুমি তাকানো মাত্রই তোমার চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া হবে আদিম কুয়াশার আড়াল 

- সৃষ্টি করা হবে ভৌতিক নেশা

 তুমি পা ফেলা মাত্রই 

তোমার চলার পথ হবে শিকলবন্দী

 হাত বাড়ানো মাত্রই তুমি গ্রেফতার হবে

 অন্ধকারের হাতে 

যতদিন বাঁচবে  তুমি -

 বাঁচতে হবে তাদের মতে- পথে

 তাদের সাজানো অংকের বাইরে 

কোন হিসাবই করবেনা 

তাদের সাজানো বাণিজ্যিক বৃত্তের বাইরে

 তুমি যাবেনা 

তাদের পেতে রাখা বস্তার ভিতরেই

 হবে তোমার বসবাস । 

কোন আলো এসে পড়লে 

তোমার তিয়াসী দুটি চোখে 

অন্ধ করে দেয়া হবে তোমাকে

 আলো দেখার অপরাধে। 

কোন সত্য এসে ধরা দিলে

 তোমার কন্ঠস্বরের ভিতর 

ছিড়ে ফেলা হবে তোমার 

স্বরযন্ত্রীয় যাবতীয় উপাদান ! 

তুমি থাকবে অন্ধ 

তুমি থাকবে বন্ধ

তুমি থাকবে বন্দী 

তুমি করবে সন্ধি

তুমি থাকবে  গুহা বাসে

তুমি থাকবে সর্বনাশে! 







Tuesday, March 7, 2023

আজ আকাশে লেখা হবে


শাহজাহান কবীর 

আজ আকাশে এমন কিছু লেখা হবে

যা ইতিপূর্বে কখনোই লেখা হয়নি।

ভবিষ্যতেও কখনো লেখা হবেনা।

আজ উর্ধ্বলোকে আমাকে নিয়ে 

এমন কিছু ঘটবে যা ইতিপূর্বে কোনদিন ঘটেনি 

আগামীতেও কোনদিন ঘটবেনা। 

আজ আকাশে এমন কেউ থাকবে 

যে ইতিপূর্বে কখনোই ছিলনা

আগামীতেও কোনদিন থাকবেনা। 

আজ আমি এমনকিচ্ছু বিশ্বাস করবো

যা আমাকে জন্মসূত্রে  বিশ্বাস করানো হয়েছ

যা আমাকে ভবিষ্যতেও বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হবে 

আজ আমাকে এমন গহীনে বন্দী করা হবে

যেখানে বন্দী ছিল আমার সব পূর্ব পুরুষ 

যেখানে বন্দী থাকবে আমার পরবর্তী প্রজন্ম 

আমি কিছু দেখিনি, আমি কিছু দেখবোনা

আমি কিছু জানিনি- আমি কিছু জানবোনা

তবুও বলবো আজ আকাশে আমাকে নিয়ে

কিছু লেখা হওয়ার কথা যা কোনদিনই লেখা হয়নি

বস্তুত আজও কিছুই লেখা হবেনা। 

তবুও বলতে হবে - তবুও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।




আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর

 আলোর ঝিলিক  শাহজাহান কবীর  এই যে শনিবার  তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ--  বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি  দুলছি নিরর্থক...