Tuesday, April 25, 2023

কভিড- ফিলিংস - ( ভয়াবহ এক ভাইরাস) -শাহজাহান কবীর


 শুরুতেই সবিনয়ে নিবেদন করিতেছি যে, এই 'কভিড -ফিলিংস'  ভাইরাস মহাশয়ের বিবরণ আমি যথাসম্ভব সাধু ভাষায় বিবৃত করিবার চেষ্টা করিব। কেননা আমার  এইরূপ আশংকা হইতেছে যে চলতি ভাষার মত চটুল ও সহজ কথায়  এই ভাইরাস মহয়াশয়ের  বিবরণ আপনাদের সম্মুখে দিতে গেলে ভাইরাস মহাশয় তাহার ফিলিংসে আঘাত করিবার দরুন স্বয়ং  ক্রোধান্বিত হইতে পারেন। তাই তাহার প্রতি যথাসম্ভব উঁচুদরের সম্মান প্রদর্শন পূর্বক যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখিয়া আপনাদের সম্মুখে তাহার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলিয়া ধরিতেছি।শুরুতেই আপনাদের অবগতির জন্য জানাইতেছি যে " কভিড- ফিলিংস মহাশয় ভাইরাস হইলেও কভিড- নাইন্টিন বা অমিক্রনের সঙ্গে ইহার যথেষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে। কভিড- নাইন্টিন বা অমিক্রন  পরিত্যাজ্য  জীবাণু। এই দুইয়ের দ্বারা আক্রান্ত দেশগুলোর সরকার তাহাদের  চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বারা এবং প্রতিরোধক টীকা  প্রয়োগের মাধ্যমে এই দুই ভাইরাসকে বিতাড়িত করিবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইতেছে । পক্ষান্তরে 'কভিড- ফিলিংস' ভাইরাস যেসব দেশকে আক্রান্ত করিয়াছে সেইসব দেশের সরকার তাহার সকল বিভাগ লইয়া এই ভাইরাস মহাশয়কে বাঁচাইয়া রাখিবার সর্ব প্রকারের প্রচেষ্টায় নিয়জিত রহিয়াছে এবং এই ভাইরাস মহাশয় যেন আরও দ্বিগুণ, তিনগুণ শক্তিশালী হইয়া দেশের আপামর জনতাকে তীব্রভাবে আক্রান্ত করিতে পারে তাহার সুব্যবস্থার জন্য সেইসব রাষ্ট্র অতিশয় মনোযোগী হইয়া যাবতীয় কর্মতৎপরতা চালাইয়া যাইতেছে। আরও অধিকতর এবং বিস্ময়কর একটি ব্যাপার হইল এই যে, জগতে এমন একটি দেশ আছে যে দেশে " কভিড- ফিলিংস ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করিবার কাজে একদল সন্ত নিয়োজিত রহিয়াছে  । সেই সন্ত মহাশয় গণ কভিড- ফিলিংস ভাইরাস ছড়াইয়া দিবার কর্মকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করিবার মহান পেশা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে। তাহারা সেই দেশের জনতার মাঝে  এই ধারণার জন্ম দিতে সক্ষম হইয়াছে যে " কভিড - ফিলিংস ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া একটি অতিশয় পূণ্যের কাজ।যে কারণে সেই দেশের জনতার কাছে এই ভাইরাস একটি অতিশয় পূজনীয় ও আরাধ্য  বিষয় হইয়া উঠিয়াছে।উইপোকা যেমন  অন্ধত্বের কারণে জলন্ত অগ্নিতে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া আত্মাহুতি দেয় তেমন সেই দেশের জনতা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হইবার আকুল আকাঙ্খা লইয়া  দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হইয়া দলে দলে  ছুটিয়া বেড়াইতেছে। অবস্থা  এমন হইয়াছে যে সেই দেশের ভিন্ন সম্প্রদায়ের কতিপয়  লোকজন  এখন তাহাদের অতি প্রয়োজনীয় বাক্যলাপ করিতেও ভীত সন্ত্রস্ত হইয়া থাকে এই কারণে যে মনের ভুলে আবার কোন বাক্য বা বাক্যাংশ এমন বেফাঁস হইয়া যায় কিনা যাহতে  কভিড- ফিলিংস মহাশয় আবার আঘাত প্রাপ্ত হইয়া ক্ষ্যাপিয়া উঠে। কেবল এইসব কতিপয়ের কাছেই এই ভাইরাস একটি ভয়াবহ আতংক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তাই এই দুর্ভাগা কতিপয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে তাহারা বাঁচিয়া থাকিতে আর বাক্যালাপ করিবেনা। কারণ তাহারা বিলক্ষণ স্বচোক্ষে অবলোকন করিয়াছে যে  - তাহাদের মধ্যে কেউ কেউ বেফাঁস বাক্যালাপ করিয়া  কভিড- ফিলিংস মহাশয়কে অসম্মান করার অপরাধে ইতোমধ্যে নানারকম ন্যক্কারজনক শাস্তিতে নিপতিত হইয়াছে।অতএব সাবধান!  অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক। যদ্যপি এই একটি বিষয়ের  ফিলিংসের প্রতি অতিশয় আসক্তি জন্মাইবার দরুন কথিত সেই দেশের জনতার দেহাভ্যন্তরস্থ অন্যান্য সকল ফিলিংস ইতোমধ্যে ভোতা বা সম্পূর্ণ অকেজো হইয়া গিয়াছে তথাপি তাহারা কভিড- ফিলিংসকে তাহাদের মাথার মনি হিসাবেই মান্য করিয়া লইয়াছে। ইহাতে কথিত সেই দেশটির জনতার মধ্যে যে বিশাল একটি সংখ্যা রহিয়াছে যাহাদের মধ্যে কতক ঘুষ খাইয়া জীবন ধারণ করে, কতক  দুর্নীতি করিয়া বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়িয়া লয়, কতক আছে অবৈধভাবে পণ্য মজুত করিয়া, বাজার সিন্ডিকেট সৃষ্টি করিয়া জনতার অর্থ লুটপাট করিয়া নিজেদের ফুলাইয়া ফাঁপাইয়া তুলিতেছে। এবং আরও কতক আছে যাহারা ক্রমাগত নারী নির্যাতন, বলৎকার করিয়া মাস্তি মৌজ করিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দিয়া তাহাদের অসৎ জীবন তরতর করিয়া আরামসে চালাইয়া লইয়া যাইতেছে সেইসব লোকদের মনে  বিন্দু পরিমানও ভয়ভীতি জাগ্রত হইতেছেনা। কারণ তাহাদের ইত্যাকার অপকর্মে সেই দেশের জনতার কোন ফিলিংকেই  কখনোই স্পর্শ করিতে পারে না।অর্থাৎ  কভিড- ফিলিংস ছাড়া অন্যকোন রকম ফিলিংস তাহাদের থাকুক ইহা মনের ভুলেও সেই দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে না। অতএব জয়তু কভিড- ফিলিংস !  জিতে রহো! 

Friday, April 21, 2023

সোবান আলীর চান রাইত -শাহজাহান কবীর। ( ছোটগল্প)



 প্রচন্ড ভীড়ে, দু:সহ গরমে ঘেমে - নেয়ে সোবান আলীর পরিবার যখন ঈদের কেনাকাটা কোন রকমে শেষ করে বাড়ীতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল ততক্ষণে ঈদ বাজারের ভীড়ের অবস্থা এমন হলো যে যতদুর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত পুরো এলাকাটি যেন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ানো বিপুল জনতার বিস্তৃত ভীড়ে এক বিশাল জনসমুদ্রে  পরিনত হয়েছে। 
বৈশাখের সূর্য তখন অনেকখানি পশ্চিমমুখী হলেও রোজাদারদের প্রতি কোনরকম দয়ামায়া না দেখিয়ে  যেন আরও উগ্রতা নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা জমাটবদ্ধ জনতার উপর আগুন ছড়াতে লাগল।গরমে, ঘামে, ভীড়ের চাপে  প্রতিটি মানুষের চোখ মুখের অবস্থা এমন করুন দেখাচ্ছে যে মনে হচ্ছে অসংখ্য মানুষ কোন সংকীর্ণ ফাঁদে আটকা পড়ে এই মহাবিপদ থেকে  উদ্ধার পাওয়ার জন্য  প্রাণপণে কোন উপায় খুঁজছে।সোবান আলী মহাবিরক্ত চোখে বেরোবার পথের দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলে- 'অইছে কাম, এই ভীড়ের মধ্যে বাইর অইবো ক্যামনে?  বিরাট বিপদে পড়লাম দেহি।" সোবহান আলীকে ঘিরে তার ছোট ছোট চার ছেলে মেয়ে। তিন মেয়ে এক ছেলে। ছেলেটা সবার ছোট - ছয় বছরের শিশু। পেছনে তার স্ত্রী জরিনা। তার এক হাতে একটা ব্যাগ আর অন্যহাত ব্যস্ত শাড়ি সামলানোর জন্য। ভীড়ের চাপে বার বার শাড়ির আঁচল পড়ে যাচ্ছে। কিছুতেই সামলাতে পারছেনা। বাকী জিনিস পত্র সব একটি বড় ব্যাগে।সেই ব্যাগ সোবান আলীর কাঁধে। এক হাতে ব্যাগ ধরা অন্য হাতে ভীড়ের মধ্যে পুত্র কন্যাদের সামাল দেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টায় অস্থির সোবান আলী পেছনে থাকা স্ত্রীর উদ্দেশ্য যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে উঁচু গলায় বলে- " একশ বার কইলাম, চানরাইতের বাজার,ভীড়ের মধ্যে পোলাপান বাজারে আননের দরকার নাই।শুনলো না আমার কথা।হে চৌদ্দ গোষ্ঠী লইয়া ঈদের বাজার করবো। অহন ঠেলাডাতো বুঝতাছি আমি,তার কি  "
সোবহান আলীর এই কথা জরিনা শুনতে পেলে সোবান আলীকেও জরিনার বাজখাঁই গলার দশ কথা  শুনতে হতো। কিন্তু ভীড়ের ধাক্কায় সোবান আলী ততক্ষণে  পুত্রকন্যা সহ জরিনা থেকে  অনেক খানি দূরে সড়ে গেছে। এদিকে পাশের এক জুতার দোকানের দুই সেলসম্যান দ্বৈত কন্ঠে সুর করে বলছে  " মা বইনেরা শুইনা যান, লুইচ্ছা হইতে সাবধান।  আপনার আশেপাশে, লুচ্ছারা ঘুরতে আছে। স্বামী সন্তানদের খুঁজে ব্যস্ত জরিনা যখন  দুই সেলসম্যানের সুরের দিকে খানিকটা মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছিল তখনই তার নিতম্বে একটা হাতের চাপ অনুভব করলো। সঙ্গে সঙ্গে পানির নীচে হাতড়িয়ে মাছ ধরার মত ভীড়ের মধ্যে হাতড়িয়ে জরিনা সেই হাতটি খপ করে ধরে ফেললো । তারপর অগ্নিমূর্তি ধারণ করে হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো   কাঁচাপাকা দাড়িওয়ালা এক প্রবীণ জরিনার থাবা থেকে তার বেয়াড়া হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।জরিনা  পৌঢ়ের মুখের দিকে তাকি চিৎকার করে বলে উঠে " হারামজাদা বদমাইস, হাটেবাজারে আইসা লুচ্চামি করস!  আইজ তরে ছাড়ুম না।জুতা দিয়া বাইরায়া এক্কেবারে লম্বা কইরা ফালামু। জরিনা জুতা হাতে নেয়ার জন্য তার ডান পা- খানা উঁচু করার চেষ্টা করতেই জুতাটি তার হাতে না উঠে ভীড়ের ধাক্কায়  পলকের মধ্যে কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। এই সুযোগে কাঁচাপাকা দাড়িওয়ালা প্রবীণ  তার বেয়াড়া হাত উদ্ধার করে মুহূর্তের মধ্যে জনারণ্যে হারিয়ে গেল। জরিনা তার হারিয়ে যাওয়া জুতার সন্ধানের চেষ্টা না করে বরং তার নিতম্বে চাপ প্রয়োগকারীর প্রতি বিরতিহীন গালাগাল করতে করতে স্বামী সন্তানের সন্ধান করতে লাগলো। এদিকে সোবান আলী কিছুদূর পর্যন্ত  তার পুত্র কন্যার দলকে সামলে নিয়ে চলার পর হঠাৎ একটা ধাক্কায় সে পুত্রকন্যা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।  চার শিশু পিতা থেকে বিচ্ছিন্ন  হয়ে পরস্পরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভীড়ের ধাক্কায় এদিক সেদিক যেতে যেতে চিৎকার করে আব্বা আব্বাগো বলে কাঁদতে  লাগলো। মানুষের কথার আওয়াজে  খুব কাছেই থাকা পুত্রকন্যার কান্নার শব্দ সোবান আলী শুনতে পাচ্ছেনা। সোবান আলী নিজেও  সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে পুত্র কন্যাদের ডাকতে লাগলো। অনেক ক্ষণ ডাকাডাকি আর কান্নাকাটির পর সোবান আলী তার কান্নারত পুত্র কন্যাদের আবিষ্কার করতে পারে।শিশুরা তার পিতাকে পেয়ে চারদিকে চারজন জড়িয়ে ধরে  আব্বাগো বলে আরও দ্বিগুণ শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। সোবান আলী জোরে ধমক দেয়- " চুপ থাক!  মরা কান্দন শুরু করছস কি জন্য?  মার কথায় লাফাইতে লাইফাইতে আইছস কি জন্য ঈদের বাজার- অ, ফাজিলের দল। পিতার ধমকে  শিশুরা কান্না বন্ধ করলেও পিতাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পুত্রকন্যার বেড়ি,  কাঁধের ব্যাগের ওজন, ঠাসা ভীড়ের চাপ আর গরমে অতিষ্ঠ সোবান আলীর মনে হচ্ছিল সে চোরাবালি তে তলিয়ে যাচ্ছে। তার এই নাজেহাল অবস্থার  জন্য স্ত্রী জরিনাকে দায়ী করে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ সোবান আলী দাঁতে দাঁত চেপে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে অশ্লীল শব্দ উদগীরণ করতে থাকে - " হারামজাদি মাগী! আমার একটা কথা হুনেনা - পোলাপান গুলারে না আনলে এই অবস্থা অইতো!  বেত্তমিজ মাগী!  জরিনার উপর এমনিতেই আজ সোবান আলীর অনেক  রাগ। এইবার ঈদের বাজার করার কোন ইচ্ছা ছিলনা তার। গরীবের আবার কিয়ের ঈদ।  হাত একেবারে খালি। একমাত্র সম্বল ব্যাটারির অটোগাড়ীটা দুই মাস আগে চুরি হয়েছে। সোবান আলী এই দুইমাস নানান জায়গায় ঘুরেছে কাজের সন্ধানে। পরিশ্রমের কাজ তার দ্বারা হয়না। তার পেটে মারাত্মক শুল ব্যাদনা। পরিশ্রমের কাজ করতে গেলেই ব্যাদনা ওঠে। ডাক্তার  বলেছে অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বিনা পরিশ্রমের কাজ সে পাবে কোথায়।  এই অবস্থায় জরিনাকে যখন বললো " এইবার ঈদমিদ বাদ রাখ।পোলাপানরে বুঝাও। টাকা পয়সা নাই। " কথাটা বলা মাত্রই চিৎকার চেচামেচি করে বাড়িঘর মাথায় তুললো জরিনা। মুখে যা আসে তাই বলতে লাগলো সোবান আলীকে।" নিমুরাদ্দেয়া এক বেডার ঘরে বাপে বিয়া দিছে। বাপে বিয়া দেওনের আর মানুষ পাইলোনা, আমার জীবনডা ছারখার কইরা দিল এই বেডায়। বছরের পরথম ঈদ হে কয় ঈদের বাজার করতে  পারতো না।তার কাছে টেকা নাই।দুনিয়ার সব মাইনসের কাছে টেকা থাকে তার কাছে থাকে না। কি কপাল আমার। জরিনার সর্ব শেষ কথা ছিল এই- পোলাপানের জন্য ঈদের কাপড় চোপড় না কিনলে পোলাপান লইয়া লইয়া আমি দেশান্তরি অইমু 
।অবশেষে অনেকদিন ধরে জমানো বিশ হাজার টাকা নিয়ে ঈদের বাজার করতে আসলো।টাকাটা সে জমাচ্ছিল তার পেটের অপারেশন করানোর জন্য। ত্রিশ হাজার টাকা হলেই অপারেশনটা করানো যেতো।ডাক্তার তাই বলেছিল।কিন্তু গাড়িটা চুরি হওয়ায় বিশ হাজারের মধ্যেই আটকে গেল তার টাকা জমানো।তবু সোবান আলী এই টাকাটায় হাত দিতে চাইছিলনা। যেভাবেই হউক বাকি টাকাটা যোগার করে অপারেশনটা করাবেই। পেটের এই যন্ত্রণা আর সহ্য করা যায়না। মাঝে মাঝে অবস্থা এমন হয় যে ব্যথার কারণে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে সোবান আলীর। বাজারের টাকা কিভাবে যোগাড় হলো একবারও জানতে চায়নি জরিনা। ছেলেমেয়েদের জন্য কেনাকাটা করতে পারবে এই আনন্দেই সে আত্মহারা। জরিনার জন্য একটা শাড়ি আর সোবান আলীর জন্য একটা পাঞ্জাবিও কেনা হয়েছে। তবে আড়াইশ টাকার পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে ভীড়ের চাপে তার গায়ে থাকা তিনশো টাকা দামের জামাটা ছিড়ে গেল সোবান আলীর।সব মিলিয়ে সোবান আলীর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকলেও অবশেষে সন্ধার সামান্য আগে বাড়িতে পৌঁছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় কাল বৈশাখী ঝড়। ঝড় বৃষ্টির কারণে ঈদের চাঁদ দেখা না গেলেও আগামীকাল ঈদ নিশ্চিত জানা গেল। বড় মেয়ের জামা অন্যদের চেয়ে খারাপ হয়েছে সে কান্নাকাটি করছে।ছোট ছেলের জুতা পায়ে ঠিক মত লাগেনা সে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলছে।  গরুর মাংস আটশ টাকা কেজি, তাই গরুর মাংস কেনা হয়নি।এই নিয়ে গাল ফুলিয়ে রেখেছে বড় ছেলেটা। পোলাপানের অসন্তোষ অবস্থা দেখে জরিনা আরও বেশি অসন্তুষ্ট। সেও কিছুক্ষণ বিলাপ করে কাঁদলো নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য।বিদ্যুৎ নেই।অন্ধকারে বারান্দায় একা বসে আছে সোবান আলী। হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় তার ছোট বেলার একটি চাঁদ রাতের কথা। সোবান আলী তার ভাইবোনের সাথে মাকে নিয়ে অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। আগামীকাল ঈদ,বাবার কাছে টাকা নেই,তবু বাবা বাজারে গেছে।এদিকে সব ভাইবোন অপেক্ষা করছে তার বাবা নিশ্চয়ই হাটবাজার নিয়ে ফিরবে।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয় সোবান আলীর বাবা আর ফেরে না। রাত নয়টার দিকে বিধবস্ত শরীরে বাড়িতে ফেরে বাবা। ঘরে ঢুকেই অপেক্ষা রত ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সোবান আলীর বাবা। মা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তার। সোবান আলীর বাবা বলেন - একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা হাউলাৎ করে ঈদের কিছু  কেনাকাটা করেছিলেন তিনি।মাগরিবের নামাজের ওয়াক্তে সদায়পাতি রাখা ব্যাগটা এক পরিচিত দোকানে রেখে নামাজ পড়তে যান সোবান আলীর বাবা।ফিরে এসে দেখেন  তার ব্যাগটি চুরি হয়ে গেছে। সোবান আলী ভাবে এই ঘটনা প্রায় চল্লিশ বছর আগের। চল্লিশটা বছর কেটে গেল সোবান আলীদের অভাব গেলনা। এই জীবনে কোন ঈদ, কোন চাঁদ রাত অভাব বিহীন কেটেছে কিনা সোবান আলী মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু মনে করতে পারেনা। হঠাৎ হু হু করে কেঁদে উঠে সোবান আলী।  শব্দ শুনে এগিয়ে আসে জরিনা। প্রশ্ন করে -কান্দ নাকি তুমি? সোবান আলী  অন্ধকারে অশ্রু আড়াল করে বলে - আরে না কান্দনের কি অইছে?  কান্দুম কি জন্য। জরিনা চলে যাওয়ার পর  আবারও  নি:শব্দে কাঁদে সোবান আলী। মনে মনে বলে সোবান আলীদের চান রাইত কোন দিনই সুখের অয়না।


Tuesday, April 18, 2023

অলৌকিক লাশ -শাহজাহান কবীর



হাজার বছর ধরে 
বড় সযত্নে  আছে এই লাশ
এই উত্তপ্ত উদাসীন অরণ্যে ! 
পচাগলা বদগন্ধ চক্রাকারে ঘোরে
কাল থেকে কালান্তরে 
কোটি কোটি পরজীবি পরম মমতায় 
কিলবিল করে - কিলবিল করে ;
আহা! কি যে তৃপ্তিময় আহার্যের সম্ভার এই লাশে
সেতো শুধু পোকারাই বোঝে। 

দুর্ধর্ষ  লুটেরার দল হানা দিয়েছিল 
ফুল ফলে ভরা এই শ্যামল ছায়ার বনে 
লুটে নিয়ে গেল কতকিছু 
দিয়ে গেল এই অলৌকিক লাশ 
দিয়ে গেল কিছু লাশের রক্ষক ! 
অজস্র অসহায় নিপিড়ীত মানুষ 
অলৌকিক লাশের গন্ধে 
দিশাহারা হয়ে নিজেদের পরজীবি ভাবতে লাগলো 
হুড়মুড় করে ঢুকে গেল- লাশের ভিতর বসতি গড়লো
রক্ষক দলের রক্ষা হলো
লুটেরার দল চলে গেল
অলৌকিক লাশ টিকে গেল ! 
কতিপয় মানুষ হাহাকার করলো ;
তোমরা পরজীবি পোকা নও -তোমরা  মানুষ ! 
লাশ থেকে বেরিয়ে এসো -
এসো জীবনের মতো  জীবন সাজাই ! 
রক্ষকের দল গর্জে উঠে :
অলৌকিক লাশ নিয়ে কথা ! 
ঝড় তোল!  নিপাত কর এই দুর্জনদের! 
কোটি পরজীবি ফুঁসে উঠে 
কন্ঠে তাদের রক্ষকদের গর্জন প্রতিধ্বনিত হয়
অলৌকিক লাশ নিয়ে কথা ! 
ঝড় তোল!  নিপাত কর দুর্জনের প্রাণ! 
ভয়ংকর বদগন্ধের ঝড় উঠলো মুহূর্তেই
কেঁপে উঠল উদাসীন অরণ্য ! 
অরণ্যের অবশিষ্ট কিছু শ্বেতপায়রা
উড়ে গেল দূরে - বহুদূরে  ! 





Saturday, April 15, 2023



 আমেরিকার জ্যাকসন হাইটস-এ বাঙালীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান যেন না হতে পারে তার জন্য অনেক অপচেষ্টা করেছে সেখানকার মৌলবাদী গোষ্ঠী। উচ্চ আদালতে রীট পর্যন্ত করেছে।কিন্তু অবশেষে বিজয়ী হয়েছে শিল্পীরাই। 


 হায়রে বাঙালী  

  শাহজাহান কবীর 
বাঙালী স্বভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভালবাসার তীব্র আবেগ। তারা ভালবাসাকেই সবচেয়ে বেশী ভাল বাসে। অথচ কি নিদারুণ পরিহাস- বাঙালীকে আমরণ বসবাস করতে হয় ঘৃণার মধ্যে। যে ঘৃণা তারা সহ্য করতে পারেনা সেই ঘৃণাই হয়েছে বাঙালীর নিত্যদিনের চর্চা। অতি তুচ্ছ কারণে বাঙালী তার পাশের মানুষটকে ঘৃণা করে। কারণ পাশের মানুষটি  অন্য ধর্মের লোক,অথবা একই ধর্মের লোক হলেও যদি লোকটি ধার্মিক না হয়  অর্থাৎ  সে যদি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন না করে তাহলেই সে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে। মুসলমান সম্প্রদায় এই ঘৃণার কাজটি খুব আগ্রহ নিয়ে করে। কারণ তাদের ধর্ম গ্রন্থে ইসলাম  ব্যতীত  অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের অপবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আটানব্বই নম্বর সুরার সাত নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস না করে অন্য ধর্মে বিশ্বাস করবে তারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। সুতরাং  মুসলমান সম্প্রদায় সব সময় তাদের ধর্মের উপর উদারতার একটা তকমা লাগিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সঙ্গত কারণেই তাদের চিন্তায় ,তাদের ব্যবহারে ভিন্ন  সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা আর অবজ্ঞারই প্রকাশ ঘটে সব সময়।সব ধর্মীয় সংস্কৃতিই সব সময়ই ভালবাসার বিরুদ্ধে,, সাম্প্রদায়িক  সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এটাতো নির্জলা সত্য । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মানুষে মানুষ ভালবাসার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন অবস্থান নেয় ইসলাম ধর্ম । বিশেষ করে নারী- পুরুষের প্রেম ভালবাসাতো ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত নারী- পুরুষের ভালবাসা বা যৌন কর্মকে ব্যভিচার বলে গণ্য করা হয়। ব্যভিচারের শাস্তি হলো মাটিতে কোমড় পর্যন্ত পুতে পাথর মারা। তবে দাষীর সাথে যৌন কর্ম করলে তাকে ব্যভিচার বলা হবেনা। দাষীর সাথে যৌন কর্মকে পবিত্র কোরানে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন কি দাসীর সাথে যৌন কর্ম করারা জন্য দাসীর অনুমতিরও প্রয়োজন নেই।পুরুষ মানুষের  ইচ্ছা করলেই তিনি দাসীকে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিবাহ ছাড়া নারী পুরুষ কেউ কাউকে ভালবেসে কাছে আসতে পারবেনা। জিহাদ করে নারীকে দাসী বানিয়ে যৌনতা করতে পারবে।এমন কি পবিত্র কোরান অনুযায়ী পুরুষের মন চাইলে যে কোন নারীকে কিছু পয়সা দিয়ে ২/ ৪ দিনের জন্য অস্থায়ী বিয়ে করে ফেলতে পারবে। আর বিয়ে না করতে পারলেও যদি উত্তেজনার বসে কোন নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করে ফেলে তাতে সমস্যা নেই নারীটিকে যৌনতার পারিশ্রমিক হিসাবে কিছু টাকা দিতে হবে।তবে তবে কোন নারীর সঙ্গে পীরিত করে যৌনাচার করা যাবেনা।তাহলে ব্যভিচার হয়ে যাবে।  পয়সাপাতি দিয়ে কোআর মুসলমান ব্যতিত কোন পুরুষ মানুষ অন্যকোন ধর্মের পুরুষ মানুষের সাথে ভাতৃত্বের বন্ধন বা কোন প্রকার সুসম্পর্ক রাখতে পারবেনা। ইসলাম ধর্মের বিধান বাঙালী শিশু বিশেষ করে মান শিশুর জ্ঞান হওয়ার পরই তার পরিবার থেকে ধর্মীয় বিষয়ে একটা বিশেষ যে ধারণা পায় তা হলো - তার ধর্মটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। অন্য ধর্মগুলো একেবারেই বাজে জিনিস। অন্যান্য ধর্মের মানুষ একেবারেই নিম্নমানের মানুষ। পরিবারের পর তার শিক্ষালয় তার আর ভজনালয় প্রতিটি মুসলমান শিশুর মনে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত করে দেয়। শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারণা মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে  এক উচ্ছৃঙ্খল অহংকারর জন্ম দেয় আর এই অহংকার ই তাকে ঘৃণা করতে শেখায়। এক কথায় পরিবার,সামাজিক  ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মের মাধ্যমে  মুসলমানদের ঘৃণা শেখানোর দায়িত্ব নেয়। সংখ্যালগু হওয়ার কারণে হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায় গুলোর এধরণের ঘৃণার সংস্কৃতি খুব একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পায়না। সে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের ঘৃণার বিপরীতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে যে পালটা ক্ষোভ বা অসন্তোষের সৃষ্টি হয়  সেটি বাস্তব কারণেই অপ্রকাশিত থেকে যায়। অবশ্য নিজেদের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই ধরনের বিপজ্জনক অহংকার বোধের ধারণা অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুলো থেকেই তারা পায়না যতটা মুসলমানরা পায়।বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক  পেশাদার ধর্মীয় বক্তা  রয়েছে যারা মুসলমানদের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার ক্রমাগত ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে বেড়ায় সেই সঙ্গে এইসব বক্তারা মুসলমানদের মধ্যে  অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে  তোলার ক্ষেত্রেও বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। শতকরা নব্বই ভাগ পরিবারের  শিশুরা তাদের পিতা- মাতার কাছ থেকে শিক্ষা পায় যে,কেবল তাদের ধর্মটাই  জগতে টিকে থাকার উপযুক্ত । অন্যান্য ধর্মগুলো থাকাই উচিত নয়। অন্য ধর্মের লোক মানেই অচ্যুত, নিকৃষ্ট। শিশু মনে নিত্যদিন  অন্যান্য  সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির এই এই অপপ্রয়াস জাতীয় জীবনে সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ বাঙালীর জাতীয় সংস্কৃতির অংশ নয়,এই বিদ্বেষ মূলত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালীর স্বভাবের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।  বেলা শেষে বাঙালী যখন নিজের দিকের তাকায়,নিজের আন্তরিক অবস্থা অনুভব করে তখন দেখতে পায় তার বুকের ভিতর হাহাকার করছে ভালবাসার তীব্র আকাঙ্খা। 

Friday, April 14, 2023


      



বন্দী বৃত্তান্ত 
শাহজাহান কবীর 

আমার চোখের শিকল খুলে দাও 
আমি দিগন্তের ওপারে নিয়ে যাব দৃষ্টি 
সেই যে।শৈশবে আদিম এক টবে
রোপণ করেছ আমার অবুঝ পায়ের পাতা
সেই থেকে আমি বনসাই
ক্রমাগত ছোট হচ্ছি- কেবলই ছোট হচ্ছি
যুগ যায়, শতাব্দী যায়- আমার শৈশব যায়না। 
আমি চেয়েছিলাম ফসলের জমিন চাষী হওয়ার জন্য 
তোমরা আমাকে নিয়ে গেলে তোমাদের সাজানো
 সাত আকাশের অলিক মহাজনের কাছে। 
নিয়ে গেলে আমাকে মধু আর শরাবের নহর গাঁথায়। 
আমার ভূমি হলো ঊষর মরু - জন্মেনা তৃণ তরু 
আমি তাই বিদ্বেষের বীজ বুনি - ঘরে তুলি।জিঘৎসা । 
আমি যাপিত জীবন সাজাই অর্থে - অট্টালিকায়
প্রবৃদ্ধির সকল আয়োজন আর উন্মাদনায়
সবই ঘটে,  ঘটানো হয়- শুধু হয়না মুক্তি আমার
আড়ালের ওপারে অবারিত শূন্য - নিখাদ সত্য
বোধের বিস্তৃত প্রান্তর আমার কেঁদে মরে নিরন্তর 
দেখা হয়না আমার হায় ! 
দেখা হলোনা আমার ! 

Wednesday, April 5, 2023

'বিয়ে' - একটি অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট সামাজিক কুসংস্কার। শাহজাহান কবীর।

নারী- পুরুষ বা প্রাণী জগতের সকল শ্রেণীর মধ্যে বিপরীত  লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক আকর্ষণ প্রকৃতির এক অনিবার্য ও স্বাভাবিক জৈবিক প্রবাহ। নদী ও সমুদ্র  স্রোত, বায়ু প্রবাহ, পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি - এই সমস্ত কিছুরই প্রাকৃতিক স্বাভাবিক গতিধারাকে যেমন কোন আবেগ প্রসূত বিধিবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ করা অসম্ভব তেমনি মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে যে স্বাভাবিক জৈবিক অনুভব -আকর্ষণ বা জৈবিক কর্মকান্ড সেগুলোকেও কোন বিধিবদ্ধ গন্ডিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ সীমাবদ্ধ করাও একটি প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব্যাপার। মানব সমাজে এইরকম একটি ভয়াবহ  প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব্যাপার হচ্ছে  বিয়ে। আমার এই কথা শুনে শুরুতেই বাঙালি একটা বড় রকম ধাক্কা খাবে জানি। কারণ অজ্ঞ সমাজপতি আর ধর্মের পৃষ্ঠপোষকদের দ্বারা পৃথিবীর ব্যাপী হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত হয়েছে বিভ্রান্ত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং সেই দিশাহারা সমাজ ব্যবস্থার অনিবার্য ফলাফল হচ্ছে দিকে দিকে অবিকশিত মানবগোষ্ঠীর অসুস্থ জনপদের বিস্তার।  বিয়ে হচ্ছে সেই অসুস্থ প্রাচীন সমাজের তৈরি একটি অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর ও  উদ্ভট সামাজিক কুসংস্কার। যৌণতাকে বিধিবদ্ধ করার অপচেষ্টার মধ্যে দিয়ে জীবনকেই একটা অস্বস্তিকর, নোংরা, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কারাগারে বন্দী করা হয়েছে বিয়ে নামক একটা হাস্যকর বিধানের মাধ্যমে। নারী পুরুষের বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের  অনুভূতি সৃষ্টি হয়। পরস্পরের প্রতি বিভিন্ন রকম প্রত্যাশা,আকুলতা, ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার আকাঙ্খা  তৈরি হয়। তৈরি হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তীব্র আবেগ।তবে এই আবেগ এই অনুভূতি অবশ্যই পারস্পরিক পরিপ্রেক্ষিতের নিরিখেই হয় এবং অবশ্যই সেই পরিপ্রেক্ষিতের উপর আবেগ অনুভূতির একটি স্থায়িত্ব কালও তৈরি হয়। কোনভাবেই মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগ  অনুভুতির ব্যাপার সর্বদা একই রকম  বা অপরিবর্তনীয় থাকা সম্ভব নয়।  প্রতিটি নারী পুরুষই  একটা নিজস্বতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে এবং সেই নিজস্বতা ও সতন্ত্রতা নিয়েই তার মনো-দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।একের সাথে অন্যের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, রুচি অভিরুচি,অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত পার্থক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নারী পুরুষ যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন এইসব পার্থক্য ছাপিয়ে তাদের মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠে কিছু হরমোন। মস্তিষ্কের থেলামাস থেকে রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ডোপামিন, নরেপিনেফ্রিন,অক্সিটোসিন, ভেসোপ্রেসিন ও সেরোটোনিন নামের কিছু হরমোনের নি:সরণ জনিত কারণ নরনারীর মধ্যে, প্রেম,ভালবাসা,পারস্পরিক তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঘটে থাকে এবং এই হরমোনগুলোর নি:সরণের পরিমাণ নারী পুরুষের সম্পর্কের শুরুতে যেমন থাকে সময়ের সাথে তেমনটি আর থাকেনা।নানাবিধ কারণে হরমোনের নি:সরন কমতে থাকে।তখনই সম্পর্কের মধ্যে আকর্ষণের মাত্রা কমতে থাকে এবং পরস্পরের মধ্যে পছন্দ অপছন্দের দ্বন্দ্ব, রুচি অভিরুচির সংঘাত বাড়তে থাকে। হরমোনের কারণে তীব্র আকর্ষনের পর্যায়ে পরস্পরের ব্যক্তিগত ত্রুটি বিচ্যুতগুলো চোখে না পড়লেও হরমোনের কমে যাওয়ার পর্যায়ে এসে পরস্পরের ভুল ত্রুটিগুলো পরস্পরের কাছে খুব সহজেই ধরা পড়তে থাকে। তখন একে অন্যের কাছে ক্রমাগত বিরম্বদায়ক একজন সঙ্গী হয়ে উঠে এবং খুব দ্রুতই সবাই এই ধরনের একগুঁয়ে, বিরক্তিকর সঙ্গীর সঙ্গ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষের ভাললাগার বিষয়টি অত্যন্ত সংগত কারণেই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু মুর্খ সমাজপতি, ধর্মপতিরা অস্থায়ী একটা মনো-দৈহিক বিষয়কে বিয়ে নামক একটি সম্পর্কের ফ্রেমে বন্দী করে চিরস্থায়ী করার একটা অপচেষ্টা করে সেই অপচেষ্টাকেই সামাজিক বিধানরূপে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। যখন প্রতিটি স্বামী - স্ত্রী  এই ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তখনই সামাজিক বিধান এসে তার সামনে প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর তুলে দাঁড়ায়। যেহেতু সমাজ স্বামী- স্ত্রী নামক এই সম্পর্ককে একটা অনস্বীকার্য বাধ্যতামূলক বোঝা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে সুতরাং 

আলোর ঝিলিক - শাহজাহান কবীর

 আলোর ঝিলিক  শাহজাহান কবীর  এই যে শনিবার  তারপর আর কি- শুধুই রবিবার সোম,মঙ্গল, বুধ--  বৃহস্পতি -শুক্র --- এইতো তুমি, এইতো আমি  দুলছি নিরর্থক...